মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রপক্ষ
মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে। এর মাধ্যমে এ মামলার শেষ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হলো। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হবে।
যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, মুজাহিদ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তাই এই বাহিনীর সব দায় থেকে তিনি আলাদা নন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল যুক্তি তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোকলেছুর রহমান। এ সময় আসামির কাঠগড়ায় মুজাহিদ হাজির ছিলেন।
মোকলেছুর রহমান মুজাহিদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের অভিযোগ এনে বলেন, মুজাহিদ একাত্তরের প্রথম দিকে ঢাকা জেলা ইসলামী ছাত্র সংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন) সভাপতি হন। একাত্তরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক এবং অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছাত্র সংঘের সভাপতি থাকাকালে আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তাই এই বাহিনীর সব দায় থেকে তিনি আলাদা নন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি একাত্তরে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে বলেন, প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে আলবদর আয়োজিত এক সমাবেশে ছাত্র সংঘের সভাপতি হিসেবে মুজাহিদ বক্তব্য দেন। প্রতিবেদনের সঙ্গে থাকা ছবির ক্যাপশনেও মুজাহিদের বক্তব্য দেওয়ার কথা লেখা আছে। তিনি বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন এবং পূর্ব পাকিস্তান গোয়েন্দা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য মুজাহিদ ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আলবদরের প্রধান হিসেবে রংপুর, বগুড়া, মাগুরাসহ সারা দেশে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে জনসংযোগ করে ছাত্র সংঘের সদস্যদের আলবদর বাহিনীতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মোকলেসুর রহমান বলেন, মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে তাঁদের ‘দুষ্কৃতকারী’ ও ‘ভারতের দালাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। রংপুরে ছাত্র সংঘের কর্মী সমাবেশে মুজাহিদ বলেন, ছাত্র সংঘের সদস্য ছাড়া যেন কেউ আলবদর বাহিনীতে যোগ দিতে না পারে। মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর প্রধান বলেই এই বাহিনীতে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শাহরিয়ার কবির, জহির উদ্দিন জালাল ও রুস্তম আলীর সাক্ষ্যেও এর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে। ৭ নভেম্বর এক বক্তব্যে মুজাহিদ হিন্দু লেখকের লেখা বই ও গ্রন্থাগার পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এর পর পরই ঢাকার ব্রাহ্মসমাজের প্রাচীন একটি গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, আলবদর বইয়ে উল্লেখ আছে, একদিকে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করছে, অন্যদিকে ছাত্র সংঘের সভাপতি আলবদরদের উদ্দেশে সমাপনী বক্তব্য দেন। ওই সময় মুজাহিদ ছিলেন ছাত্র সংঘের সভাপতি। রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা নথির মাধ্যমে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় এ মামলার কার্যক্রম ১২ মে (রোববার) পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।