মেয়েদের আর পেছনের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই

বেগম–এর সম্পাদক নূরজাহান বেগমের (মাঝে) ৮৯তম জন্মদিন ছিল গতকাল৷ এ উপলক্ষে পুরান ঢাকার নারিন্দার শরৎ গুপ্ত রোডের বাসায় বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন (বাঁয়ে) ও ছোট মেয়ে রিনা ইয়াসমিনসহ (ডান থেকে দ্বিতীয়) স্বজনদের নিয়ে কেক কাটেন তিনি l ছবি: প্রথম আলো
বেগম–এর সম্পাদক নূরজাহান বেগমের (মাঝে) ৮৯তম জন্মদিন ছিল গতকাল৷ এ উপলক্ষে পুরান ঢাকার নারিন্দার শরৎ গুপ্ত রোডের বাসায় বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন (বাঁয়ে) ও ছোট মেয়ে রিনা ইয়াসমিনসহ (ডান থেকে দ্বিতীয়) স্বজনদের নিয়ে কেক কাটেন তিনি l ছবি: প্রথম আলো

শামিয়ানা টানানো। বিভিন্ন রঙের বেলুন উড়ছে। লাল, নীল রঙিন ঝালরে সাজানো হয়েছে জায়গাটি। একটি সোফায় বসে আছেন নূরজাহান বেগম। ফুল, নানা ধরনের উপহারসামগ্রী নিয়ে এসে কেউ পা ছঁুয়ে সালাম করছেন; আবার কেউ কেউ নূরজাহান বেগমকে জড়িয়ে ধরে আদর করছেন। তাঁরা সবাই আসছেন সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমকে ৮৯তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে।
গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার নারিন্দার শরৎ গুপ্ত রোডের ৩৮/৩৯ নম্বর বাড়ির নিচতলায় বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান ও তাঁর স্বামী গৌরব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার ফজলুর রহমান খান জন্মদিনের আয়োজন করেন। এই দম্পতির মেয়ে নানির জন্য অনেক বড় একটি কেক ও শাড়ি পাঠিয়েছে। সেই শাড়ি পরেই মোমবাতি নিভিয়ে নূরহাজান বেগম কেক কাটেন৷ তাঁর ছোট মেয়ে রিনা ইয়াসমিন ও তাঁর মেয়ে উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণার পাশাপাশি নূরজাহান বেগমের প্রিয়জনেরা গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে।
বয়সের ভারে ক্লান্ত নারী সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি নূরজাহান বেগম। ১৯৪৭ সালে নারীদের লেখা ও ছবি দিয়ে প্রকাশিত নারীবিষয়ক বেগম পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এখনো তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সেই পত্রিকাটির বয়সও এখন ৬৮ বছর। নূরজাহান বেগমকে শুভেচ্ছা জানাতে আসা বেশির ভাগ নারীই বেগম-এর লেখিকা। জীবনে প্রথম ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে যেসব নারী পত্রিকাটিকে ভালোবেসেছিলেন, তাঁরা এখনো পত্রিকাটিকে নিজের হিসেবেই মনে করেন। আর নূরজাহান বেগম? তিনি তো একান্ত আপনজন, ভালোবাসার মানুষ।
হুইলচেয়ার ছাড়া এখন আর চলাফেরা করতে পারেন না নূরজাহান বেগম। দুই চোখেও তেমন একটা দেখেন না। শরীরের শক্তি কমে এলেও নূরজাহান বেগমের কণ্ঠের দৃঢ়তা একই আছে। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের আর পেছনের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। পথ এখন প্রশস্ত। আপনারা এগিয়ে চলুন। পুরুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এগিয়ে চলুন।’
১৯২৫ সালের ৪ জুন জন্ম নূরজাহান বেগমের। তিনি বলেন, ‘আমি অন্ধকার যুগে জন্মগ্রহণ করেছি। যে যুগে মেয়েদের অবরুদ্ধ করে রাখা হতো। সেই ধরনের পরিবেশে মুসলমান মেয়েরা প্রথম সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেছে। হিন্দু মেয়েরাও তখন সাপ্তাহিক বের করার কথা চিন্তা করতে পারেনি। ফেলে আসা দিনগুলো অনেক কঠিন ছিল। আমরা দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে গেছি। নারীদের শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, উপলব্ধি করতে হবে। পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে আনতে হবে।’
সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার না থাকা এবং নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নূরজাহান বেগম। নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে বেগম-এর হাল ধরতে এগিয়ে এসেছে। তাই আমি না থাকলেও বেগম-এর লেখিকা এবং আমার মেয়েরা বেগমকে এগিয়ে নেবে, সেই ভরসা পাচ্ছি।’