মোকামতলায় ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মোকামতলা বাজারে দীর্ঘদিনেও নির্মিত হয়নি পদচারী-সেতু (ফুটওভারব্রিজ)। নেই কোনো গতিরোধকও। প্রতিনিয়ত হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ হাজারো পথচারী মহাসড়কটি পার হচ্ছে।
মোকামতলা বাজারের সাত-আটজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের এ অংশে মোকামতলা বাজার গড়ে ওঠায় এলাকাটা অত্যন্ত ব্যস্ত। এখানে মহাসড়কের পাশেই মোকামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ছাড়াও ১৩টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে মোকামতলা বাজারে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে। তাদেরও ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় মহাসড়ক।
গত বুধবার দুপুরে মহাসড়কের সোনাতলা মোড়ের সামনের সড়কে অবস্থান করে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে একের পর এক গাড়ি। এরই মধ্যে অনেকেই রীতিমতো প্রাণ হাতে নিয়ে সড়ক পার হচ্ছে। কখনো ট্রাফিক সদস্য তাদের পারাপারে সহযোগিতা করলেও গোটা বাজার এলাকায় একজন ট্রাফিক সদস্য থাকায় ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে।
ট্রাফিক সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘সব সময় ভিড় লেগেই আছে এখানে। তবে আমি বেশি জটলা হলে প্রয়োজনে যানবাহন থামিয়ে শিক্ষার্থী বা মানুষকে পার করে দিই।’
বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ছয়-সাতজন বলেন, উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত মোকামতলা বাজার। এখানে মহাসড়কে দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল করে। এ অবস্থায় মহাসড়ক পার হতে গিয়ে সব সময়েই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
সাত আনা গ্রামের শামসুল ইসলাম (৪০) বলেন, ‘মহাসড়কের যা হাল, তাতে প্রায়ই মেয়ের স্কুলে যাওয়া ও ফেরার সময় দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তা পার করে দিই। সন্তান হাতছাড়া হলেই বিপদ হতে পারে। ট্রাফিক-ব্যবস্থা উন্নত করা হলে এই দুর্ভোগের কিছুটা অবসান হতো।’
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ফরহাদ হোসেন বলে, ‘একা রাস্তা পার হতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।’
মোকামতলা বাজারের ব্যবসায়ী তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ছাত্রছাত্রীসহ পথচারীদের নিরাপদে পারাপারের সুযোগ করে দিতে একাধিকবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু আশ্বাস পর্যন্তই শেষ। কাজের কাজ কিছু হয়নি।’
মোকামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়ক পার হতে গিয়ে গত চার বছরে এখানে নয়জন ছাত্রছাত্রী ও সাতজন সাধারণ পথচারী প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে অনেক। প্রতিনিয়ত আমাদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।’
মোকাতলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পদচারী-সেতু ও গতিরোধক না থাকায় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা অনেক আন্দোলন করেও তা আদায় করতে পারিনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, ‘মোকামতলা বাজারের সোনাতলা মোড়ে একটি পদচারী-সেতু দরকার। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট জায়গায় তুলে ধরব।’