মেয়র আইভীর ওপর হামলা: অস্ত্রধারী নিয়াজুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর ইটপাটকেল ছোড়ার একপর্যায়ে একজনের হাতে অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর ইটপাটকেল ছোড়ার একপর্যায়ে একজনের হাতে অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাদীর অভিযোগ, এফআইআর হিসেবে গণ্য করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। 


নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের নির্দেশানুযায়ী থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার ২২ মাস ১৮ দিন পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলো। মামলার আসামিরা হলেন অস্ত্র নিয়ে হামলাকারী নিয়াজুল ইসলাম, অস্ত্র প্রদর্শনকারী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, যুবলীগ নেতা জানে আলম, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ। এই নয়জন ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৯০০ থেকে ১০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মেয়র আইভীর ওপর হামলার সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দেখা যায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজামকে। ১৬ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ। ছবি: প্রথম আলো
মেয়র আইভীর ওপর হামলার সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দেখা যায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজামকে। ১৬ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ। ছবি: প্রথম আলো

মামলার বাদী ও সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। ওই রিট পিটিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে উচ্চ আদালত গত ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে মামলা গ্রহণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকেল চারটায় সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কাউন্সিলর ও অন্যদের সঙ্গে নিয়ে নগর ভবন থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা এবং পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের স্বার্থে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে হেঁটে প্রচারণা শুরু করেন মেয়র। বিকেল সাড়ে চারটায় পদযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে এলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিবাদীরা অত্যাধুনিক পিস্তল, রিভলবার, শটগান ও দেশি অস্ত্র নিয়ে মেয়র আইভীকে হত্যার উদ্দেশ্যে চারদিক থেকে হামলা করে। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হয়। মেয়রসহ সঙ্গে থাকা লোকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়। হামলায় আইভীসহ ৪৩ জন গুরুতর আহত হন।

মামলায় বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঘটনার চার দিন পর ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। পরে জানা যায়, থানা কর্তৃপক্ষ সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। কোনো ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তখন পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সদর মডেল থানার পুলিশ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, বিবাদীরা সবাই সাংসদ শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্ররোচনায় ওই ঘটনা ঘটান। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ফুটপাতে হকার বসানোর কথা বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণেই বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবে মেয়র আইভীর মিছিলে ভয়াবহ হামলা করেন। বিবাদীরা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট ও গায়েব করার পরিকল্পনা করছেন। বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গ্রেপ্তার করার আবেদন করা হয়।

এ বিষয়ে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মেয়রের ওপর হামলার পরেও তখন থানা মামলা নেয়নি। তখন জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি করলেও সেই প্রতিবেদন আজও দাখিল হয়নি। প্রশাসন অপরাধ ও অপরাধীদের আড়াল করতে চেয়েছে। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়েছে। আদালতের নির্দেশনায় অপরাধীরা এখন আইনের আওতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন রফিউর রাব্বি।

উল্লেখ্যে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারির ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ঘটনার পর ২২ মাসেও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটির তিন কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়েছেন।

আরও পড়ুন: