মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে আবর্জনা আর দখল

রিকশা–ভ্যানের স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে ভাতের হোটেল, ময়লার ভাগাড় থেকে ঘোড়ার আস্তাবল—মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে এগুলোর সবকিছুরই দেখা মিলবে। শনির আখড়া থেকে নিমতলী পর্যন্ত এই উড়ালসড়কের নিচে পুরোটাই আবর্জনা আর দখলে জর্জরিত।
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার চালু হয়। চার লেনবিশিষ্ট এই ফ্লাইওভারটি শনির আখড়া থেকে বকশীবাজার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এ ফ্লাইওভার নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। আর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইওভারের নিচে উঁচু বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা ছিল মূল নকশায়। সেখানে ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও ছিল।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, উড়ালসড়কের নিচে এখন দুই শতাধিক অস্থায়ী দোকান, ভাতের হোটেল। জায়গায় জায়গায় আবর্জনার ঢিবি। শনির আখড়া-যাত্রাবাড়ী অংশ ফলের দোকান, রিকশাভ্যানের স্ট্যান্ড, চায়ের দোকান, রুমাল-টুপির দোকানের দখলে। পুরোনো প্যাকিং বাক্স, ডাবের খোসা, পলিথিনের স্তর ঢেকে ফেলেছে নিচের বিভাজকের মেঝে।
টিকাটুলীর রাজধানী মার্কেট এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস। কাপ্তান বাজার অংশে মুরগির খাঁচা ও বর্জ্যের কারণে দুর্গন্ধে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে চলাই দায়। গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া অংশে ফ্লাইওভারকে ছাদ বানিয়ে জুতার দোকান, ফলের দোকান, ভাতের হোটেল বসেছে। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে ফ্লাইওভারের নিচে বাসচালকদের ক্লাবঘরও গড়ে উঠেছে। বঙ্গবাজার থেকে নিমতলী গেটের আগ পর্যন্ত ঘোড়ার আস্তাবল আর ময়লার ভাগাড়। ঘোড়ার বিষ্ঠা আর পাশের মুরগির বাজারের বর্জ্যে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। উড়ালসড়কের নিচেই সিটি করপোরেশনের একাধিক ময়লার কনটেইনারও চোখে পড়ে।
কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে এই এলাকা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। তিনি বলেন, আবর্জনার দুর্গন্ধে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।
ভবঘুরে-মাদকসেবীদের কারণে নিচ দিয়ে হেঁটে পার হওয়া অসম্ভব আর ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধা হলেও আমরা যারা নিচ দিয়ে চলাচল করি, তাঁদের অসুবিধা কারও চোখে পড়ছে না।’
এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ফ্লাইওভারের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য প্রতি সপ্তাহে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আবার আবর্জনা জমে যায়।
দখল উচ্ছেদের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রকৌশল বিভাগ থেকে ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধনের কার্যক্রম আছে বলে শুনেছি।’ তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটের স্বল্পতা আছে। করপোরেশন এলাকার দখল উচ্ছেদের ক্ষেত্রে তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে।