মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়

>

বিশেষজ্ঞ মত: বিশেষ ধারা রাখা ঠিক নয়। এতে বাল্যবিবাহ বৈধতা পেতে পারে

.
.

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিসহ নীতিনির্ধারকেরা আশ্বস্ত করেছিলেন, আইনের খসড়া থেকে বিশেষ ধারাটি বাদ যাবে। এখন প্রত্যাশা, জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যরা বিষয়টি আবার বিবেচনা করবেন।

অপব্যবহারের আশঙ্কা

সামগ্রিকভাবে আইনটিকে স্বাগত জানানো হলেও এর বিশেষ ধারাটি​র অপব্যবহারের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১৮ বছর রাখার সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে আইনে এমন কোনো জায়গা রাখা ঠিক হবে না, যাতে সুযোগসন্ধানীরা কোনো
সুযোগ পায় এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিশোরীদের বিয়ের আয়োজন করতে পারে।

আইনের ১৯ ধারায় উল্লেখিত বিশেষ বিধানের ব্যাখ্যা সম্পর্কে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটে আদালতের নির্দেশ ও মা-বাবার সম্মতিতে অনুষ্ঠিত বিয়ে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি বলেন, অবিবাহিত মা বা অন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বেলায় এই বিধান প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসি সুলতানা মনে করেন, ‘আইনের বিশেষ ধারাটির অপব্যবহার হবে। আদালত ও বাবা-মায়ের সম্মতির কথা বলা থাকলেও আমাদের দেশে যাঁরা মেয়ের বাল্যবিবাহ দেন, তাঁদের মধ্যে কতজনের আদালত পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা আছে? আইনের নজরদারিই বা কতটুকু হয়?’ প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আইনের ফাঁকফোকর ঠিকই বের হবে। আর আইনে বিশেষ ধারা যুক্ত না করলে তাতে কোনো ক্ষতি ছিল না।

বাল্যবিবাহের সাজা: বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে বাল্যবিবাহ করলে তাদের ১৫ দিনের আটকাদেশ ও অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে বিয়ে করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

মা-বাবা আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। তবে কমপক্ষে ছয় মাসের সাজা দিতে হবে। জরিমানার টাকা শোধ না করলে তিন মাস কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিয়ে সম্পাদন বা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কাজি, রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইন না মানলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে জরিমানার টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে।

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত মামলার বিচার অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের মতোই হবে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচার করতে পারবেন। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী, আদালত নিজ উদ্যোগে বা কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বাল্যবিবাহ থামিয়ে দিতে পারবেন। বাল্যবিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তা পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন আদালত। বাল্যবিবাহ বন্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা না মানলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদ বা সমমানের পরীক্ষার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট-এগুলোর যেকোনো একটি বিয়ের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে।

আরও পড়ুন: