মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানির স্রোতে নিখোঁজ ৩ জনের লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের রাজনগরের কদমহাটা এলাকায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মনু নদ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে এই পানি প্রবেশ করছে। মৌলভীবাজার, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো
মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের রাজনগরের কদমহাটা এলাকায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মনু নদ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে এই পানি প্রবেশ করছে। মৌলভীবাজার, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো

ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শহরের কাছে মনু নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো সময় শহরে পানি ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে নিম্নাঞ্চল আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার, কমলগঞ্জ পৌরসভার একাংশ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ ছয়জনের মধ্যে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

মেঘালয়ের তুরাতে গতকালের ভারী বর্ষণে সেখানকার বিভিন্ন নদীর পানি নতুন নতুন এলাকা ভাসিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। মিজোরামেও সীমান্তবর্তী এলাকার নদীগুলো ফুঁসছে।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছে জেলার ১০টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি, জুড়ি প্রতিনিধি ও আগরতলা প্রতিনিধির কাছ থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

পানি বাড়ছে মনু নদে, শহরে মাইকিং
মৌলভীবাজার শহরের কাছে মনু নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে শহরে পানি ঢুকতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচতলার মালামাল সরিয়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে রাখার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে আজ শনিবার শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ চুইয়ে শহরের দিকে পানি প্রবেশ করায় এম সাইফুর রহমান (সাবেক সেন্ট্রাল রোড) সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গতকাল বিকেলের দিকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় মনু নদ প্রকল্প বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে গেছে। এ কারণে মনু ও ধলাই নদের ১৫টি ভাঙনে জেলার ১০টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

চার দিকে পানি আর পানি। দূরের ঈদগাহে ঈদের জামাত শেষে পানি ভেঙে বাড়ি ফিরছেন লোকজন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় রবিরবাজার-টিলাগাঁও সড়ক। মৌলভীবাজার, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো
চার দিকে পানি আর পানি। দূরের ঈদগাহে ঈদের জামাত শেষে পানি ভেঙে বাড়ি ফিরছেন লোকজন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় রবিরবাজার-টিলাগাঁও সড়ক। মৌলভীবাজার, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও উজানের পানি নেমে আসার কারণে মনু নদের পানি মৌলভীবাজার শহরের কাছে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বেলা একটায় শহরে কাছে চাঁদনীঘাটে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ১৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কয়েক ইঞ্চি পানি বাড়লে শহরের পশ্চিমবাজার এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ টপকে শহরে পানি প্রবেশ করবে। পশ্চিমবাজার এলাকা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ হুমকিতে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে শহরে পানি ঢুকতে পারে।
মনু নদের পানি বৃদ্ধিতে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে পড়ায় স্থানীয় প্রশাসন আজ শহরে জনসাধারণকে সতর্ক করে মাইকিং করেছে। তাই ঈদের দিনেও অনেককে বিভিন্ন দোকান ও বাসাবাড়ির নিচতলার মালামাল ভবনের ওপরতলাসহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলা ও মৌলভীবাজার শহরে সেনাবাহিনীর তিনটি দল বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছে।

গতকাল বিকেলের দিকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় মনু নদ প্রকল্প বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নসহ হাওর কাউয়াদীঘি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়ক রাজনগরের কদমহাটা থেকে মহলাল পর্যন্ত বন্যাকবলিত হওয়ায় এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলা সদরের সঙ্গে রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানির অবস্থা খুবই খারাপ। যেকোনো মুহূর্তে পানি ঢুকতে পারে। প্রতিরক্ষা বাঁধের সব স্থানই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা মাইকিং করে শহরবাসীকে সতর্ক করছি।’
পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর দুই ইঞ্চি বাড়লে বন্যার পানি শহরে পানি ঢুকবে। পানি বাড়ছে। আমরা বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধারসহ বিভিন্ন কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করছেন। শহরে পানি ঢুকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করতে শ্রীমঙ্গল থেকে বিজিবি সদস্যরা চলে আসবেন। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। কিন্তু পানি না কমলে তা বিতরণ করা যাচ্ছে না।’

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের রাজনগরের কদমহাটা এলাকায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মনু নদ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে এই পানি প্রবেশ করছে। মৌলভীবাজার, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো
মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের রাজনগরের কদমহাটা এলাকায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মনু নদ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে এই পানি প্রবেশ করছে। মৌলভীবাজার, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো

কমলগঞ্জে বন্যার স্রোতে নিখোঁজ ৬ জনের মধ্যে ৩ জনের লাশ উদ্ধার

সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনের টানা বৃষ্টির পর গতকাল শুক্রবার ভোররাতের টানা চার ঘণ্টার বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে নিম্নাঞ্চল আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার, কমলগঞ্জ পৌরসভার একাংশ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব গ্রামের উঠানে কোমরপানি ও বসতঘরে দুই ফুট পরিমাণ পানি থাকায় বেশির ভাগ পানিবন্দী মানুষজন আজ শনিবার ঈদুল ফিতরের নামাজও আদায় করতে পারেননি।

বন্যার পানির স্রোতে বাবা ছেলেসহ ছয়জন নিখোঁজ হন। আজ সকালে বাবা ছেলেসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাকি ৩ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার করা যায়নি। গতকাল সন্ধ্যার আগে আদমপুর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় সড়কে ওঠা পানির স্রোতে ভেসে যান ইসলামপুর ইউনিয়নের সাত্তার মিয়া (৫৫) ও তাঁর ছেলে করিম মিয়া (২০)। আজ ঈদের দিন সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে শমশেরনগর শিংরাউলীতে পানি অতিক্রম করে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় জামাল মিয়া (৫৪) নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী ভেসে যান। সকাল আটটায় আলীনগর ইউনিয়নের হালিমা বাজার এলাকায় পানির মধ্যে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় স্রোতের টানে ভেসে যান সেলিম মিয়া (৪০) নামের এক পরিবহন শ্রমিক। এ ছাড়া সকালে কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের মান্দারীবন এলাকায় সড়কে ওঠা পানির মধ্য দিয়ে চলাচলের সময় যাত্রীসহ একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা পানিতে ভেসে যায়। চালকসহ পাঁচজন যাত্রীকে উদ্ধার করা গেলেও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যাত্রীকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় আলীনগর ইউনিয়নে লাঘাটা ছড়ায় পানিতে ভেসে গেছেন অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারী। তাঁকেও উদ্ধার করা যায়নি।

আজ সকালে আদমপুর ইউনিয়নে নিখোঁজ বাবা সাত্তার মিয়া ও তাঁর ছেলে করিম মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। অপর দিকে শমশেরনগর ইউনিয়নে জামাল মিয়া নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির লাশও উদ্ধার করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক এই তিনজনের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, পানিবন্দী মানুষজনকে উদ্ধারে তেমন কোনো সুব্যবস্থা না থাকলেও সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল আসছে। তবে সমস্যা হচ্ছে মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে কমলগঞ্জে প্রবেশের সব কটি সড়ক বন্ধ রয়েছে। সড়কগুলো চার থেকে পাঁচ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এরপরও চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলকে কমলগঞ্জে আনার চেষ্টা চলছে। উজানে ভারতীয় অংশে বৃষ্টিপাত না হলে বন্যা পরিস্থিতির পর্যায়ক্রমে উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।

কুলাউড়ায় নতুন এলাকা প্লাবিত
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা। আজ সকাল থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নেমেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে ১৩ জুন ভোরে উপজেলার শরীফপুর, টিলাগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে পড়ে। এতে ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। পরে বন্যার পানি পার্শ্ববর্তী হাজীপুর, রাউৎগাঁও, ব্রাহ্মণবাজার ও কাদিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে।

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল বাছিত আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় মনু নদে পানি বেড়েই চলছে। পানির তোড়ে মনু তীরবর্তী কাউকাপন বাজারের একাংশ হুমকির মুখে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকানের মালপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। ৪২টি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। আনুমানিক ৩০০ খামারের মাছ ভেসে গেছে।

শরীফপুর ইউপির চেয়ারম্যান জোনাব আলী বলেন, ‘মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি। রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। প্রায় ৩০০ কাঁচা ঘর পানির স্রোতে ভেসে গেছে।’
জোনাব আলী বলেন, ঈদগাহ পানির নিচে থাকায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে পারেনি। সঞ্জরপুর ও পূর্বভাগের দুটি ঈদগাহে পানি না ওঠায় সেখানে আশপাশের কিছু মানুষ জামাতে অংশ নেন।

এলাকাবাসী জানায়, দুপুরের দিকে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাংসদ আবদুল মতিনের নেতৃত্বে একটি দল হাজীপুর এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদি উর রহিমের নেতৃত্বে আরেকটি দল টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন। টিলাগাঁওয়ের দলের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী। টিলাগাঁও ইউনিয়ন, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী। টিলাগাঁও ইউনিয়ন, ১৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো

ইউএনও চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী আজ বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সাত ইউনিয়নের ৯৪টি গ্রাম এখন পর্যন্ত প্লাবিত। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৮০টি পরিবার উঠেছে। সেনাবাহিনীর ৪৫ সদস্যের একটি দল কুলাউড়া পৌর শহরের নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তারা বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালানো শুরু করেছে। দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা দল পানি বিশুদ্ধকরণ বড়িসহ অন্যান্য ওষুধ বিতরণ করছে।

মিজোরামেও সীমান্তবর্তী এলাকার নদীগুলো ফুঁসছে
বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত ত্রিপুরা ও আসামের নদীগুলোর পানি কমছে। তবে মেঘালয়ের তুরাতে গতকাল শুক্রবারের ভারী বর্ষণে সেখানকার বিভিন্ন নদীর পানি নতুন নতুন এলাকা ভাসিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। মিজোরামেও সীমান্তবর্তী এলাকার নদীগুলো ফুঁসছে।

আসামের বরাক উপত্যকায় করিমগঞ্জের বরাক ও তার শাখা নদী কুশিয়ারা বাংলাদেশের সিলেটে প্রবেশ করেছে। এই বরাক কুশিয়ারার পানি কিছুটা কমলেও এখনো ভয়ংকর চেহারা নিয়ে দুকূল ভাসিয়ে ভেসে চলেছে সিলেটের দিকে।

আসামের মূল নদী ব্রহ্মপুত্র নদ, ধুবড়ি জেলা থেকে কুড়িগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানিতে ভাসছে আসামের বিস্তীর্ণ এলাকা। চীন থেকে নামা এই খরস্রোতা নদীর পানিও বাংলাদেশ হয়েই সমুদ্রে গিয়ে মেশে।
মেঘালয়ের তুরায় গতকালের বৃষ্টিতে কুলু, রিঙ্গি, সোমসোয়ারি প্রভৃতি নদীর পানি উপচে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। এই নদীগুলোর পানিও আসাম হয়ে প্রবেশ করছে বাংলাদেশেই।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রতিটি রাজ্যেই আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়বেই। আর সেই পানির বেশির ভাগটাই বাংলাদেশ হয়ে সমুদ্রে পৌঁছাবে। সামান্য কিছু পানি যাবে মিয়ানমারে।