মৎস্য ও অ্যানাটমি জাদুঘর

কর্ণফুলী, হালদা, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, সিলেটের হাওর, পাবনার খালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পুকুর, বিল ও নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে দেশীয় প্রজাতির স্বাদু পানির ২০০ মাছ। আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। এসব মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে পাশাপাশি দুটি কক্ষে অসংখ্য কাচের জারে।
কেবল মাছ নয়, বিভিন্ন প্রজাতির শক্ত খোলসযুক্ত প্রাণীর (যেমন ঝিনুক, শামুক, প্রবাল) জন্য রয়েছে আরেকটি কক্ষ। এ ছাড়া সামুদ্রিক ও স্বাদু পানির জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হচ্ছে আরেকটি কক্ষে। রয়েছে মাছ ধরার বিভিন্ন ধরনের নৌকার রেপ্লিকা। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফিশারিজ মিউজিয়াম’ বা মৎস্য জাদুঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের উদ্যোগে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই জাদুঘর।
আগামী বুধবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ জাদুঘর উদ্বোধন করতে পারেন। একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউসুফ চৌধুরী ভবনে অ্যানাটমি (অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ) জাদুঘরও উদ্বোধন করবেন তিনি। দুটি জাদুঘরেই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।
জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের দাবি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের জাদুঘর এটিই প্রথম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাছের জাদুঘর থাকলেও সেখানে শুধু স্বাদু পানির মাছ রয়েছে।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য জাদুঘরের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে ফোয়ারা। জাদুঘরে প্রবেশ করলে বাঁ পাশে রয়েছে প্রায় ৬৭০ ঘনফুট আয়তনের অ্যাকুয়ারিয়াম। এখানে ফুটিয়ে তোলা হবে ‘জলজ বাস্তুসংস্থান’ চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ আহমাদ-আল-নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাকুয়ারিয়ামে ২৫-৩০ প্রজাতির মাছ রাখা হবে। এর মাধ্যমে স্বাদু পানিতে মাছ কীভাবে থাকে, তার একটা উদাহরণ পাবে দর্শক।
মাছ জাদুঘরের প্রথম কক্ষে ২০০ প্রজাতির দেশীয় মাছ কাচের জারে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কাজলি, রানি, গুতুম, খলিশা, ঢেলা, রিঠা, মধুপাবদা, ফলি, বাইম, মহাশোলের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ যেমন আছে, তেমনি রয়েছে রুই, কাতলা, কালিবাউস, মৃগেল, ইলিশ, ভ্যাদা ইত্যাদি। পাশের কক্ষে রয়েছে সামুদ্রিক মাছ। এর মধ্যে কোরাল, কামিলা, মাইট্টা, সুরমা, চান্দা, বিশতারা, তারা, ডেভিল রে, হাতুড়ি হাঙর, শাপলাপাতা, রেমুরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে।
মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ আহমাদ-আল-নাহিদ বলেন, প্রতিটি মাছের পাশেই এর বৈজ্ঞানিক, স্থানীয় ও সাধারণ নাম এবং বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা থাকবে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি জাদুঘরে অন্য প্রাণীর সঙ্গে রয়েছে রুই মাছের কঙ্কাল l ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি জাদুঘরে অন্য প্রাণীর সঙ্গে রয়েছে রুই মাছের কঙ্কাল l ছবি: প্রথম আলো

চড়ুই থেকে হাতির কঙ্কাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউসুফ চৌধুরী ভবনের নিচতলায় প্রায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অ্যানাটমি জাদুঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অ্যানাটমি ও হিস্টলজি বিভাগের উদ্যোগে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, এই জাদুঘরে প্রায় ৬০ প্রজাতির প্রাণীর কঙ্কাল রয়েছে। প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থা, গঠন, বৈশিষ্ট্য ও কাজ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে পাঠদান করার জন্য এ জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জাদুঘরে প্রবেশ করতেই স্বাগত জানাবে সাড়ে ১৩ ফুট লম্বা অজগর সাপের কঙ্কাল। এরপর পাশেই হা করে আছে কুমির। সাপ-কুমিরের পাশেই মানুষের কঙ্কাল। এ জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ডুলহাজারা সাফারি পার্ক থেকে সংগ্রহ করা হাতির কঙ্কাল। আছে উট, ঘোড়া, হরিণ, বানর, শূকর, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন পশু-পাখির কঙ্কাল। এ ছাড়া জাদুঘরে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রায় দুই হাজার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে দুটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জাদুঘরগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সাধারণ মানুষও প্রাণী ও মাছ সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাবে। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দিনগুলো ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ে সাধারণ মানুষ দুটি জাদুঘর দেখার সুযোগ পাবেন।