যক্ষ্মা চিকিৎসায় তিন কেন্দ্র

ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কে আইসিডিডিআরবি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র
ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কে আইসিডিডিআরবি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র

নোয়াখালী জেলার কুতুবপুরের কিশোর মো. ফোরকান উদ্দীন ঢাকায় এসেছে চিকিৎসার জন্য। ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসক মির্জা মোহাম্মদ হিরণ কফ পরীক্ষা ও এক্স-রে করানোর জন্য তাকে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ধানমন্ডির যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কেন্দ্রে।
গত শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কের ওই কেন্দ্রে কথা হয় ফোরকান ও তার চাচা মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে। মো. জাকির হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছেলেটার (ফোরকান) কাশি যাচ্ছে না। ডাক্তার যক্ষ্মা সন্দেহ করছে। তাই পরীক্ষা করাতে এসেছি।’
ফোরকানের স্বাস্থ্যতথ্য একটি ফরমে লিখছিলেন কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী লায়লা শিউলি। তখনই মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে আসা এক লোক স্বাস্থ্যকর্মীর সামনে দুটি প্লাস্টিকের পাত্র রেখে বললেন, এতে থুতু আছে। ‘জিন-এক্সপার্ট’ (দ্রুত যক্ষ্মা শনাক্ত করার যন্ত্র) দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী জানতে চাইলেন, কোন চিকিৎসক পরীক্ষা করাতে থুতু পাঠিয়েছেন। উত্তরে লোকটি বললেন, অধ্যাপক আলী হোসেন।
আইসিডিডিআরবির যক্ষ্মা শনাক্তকরণ এই কেন্দ্র খোলা হয়েছে বছর দুই আগে। রাজধানীতে এ রকম কেন্দ্র আছে কমলাপুরের গোলাপবাগে (১১/এ) এবং অন্য একটি কেন্দ্র আছে প্রতিষ্ঠানের মহাখালীর কলেরা হাসপাতালের সঙ্গে। একটি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে কেন্দ্রগুলো খুলেছে আইসিডিডিআরবি। কেন্দ্রগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
লায়লা শিউলি বললেন, প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন এই কেন্দ্রে যক্ষ্মা পরীক্ষার জন্য আসে। ৫০০ টাকা দিয়ে থুতু পরীক্ষা ও এক্স-রে করা হয়। একই খরচে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে জিন-এক্সপার্টের খরচও আছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন, বেসরকারি খাতে কত যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়, কত মানুষ চিকিৎসা পায়, তার পরিসংখ্যান নেই। কারণ, বেসরকারি খাতের চিকিৎসকেরা সরকারকে সেই তথ্য দেন না, দেওয়ার কার্যকর পদ্ধতিও নেই। বেসরকারি খাতে চিকিৎসা নেওয়া যক্ষ্মা রোগীরা ওষুধের কোর্স (ছয় মাস) শেষ করে কি না, তা দেখারও ব্যবস্থা নেই। এগুলো যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বড় দুর্বলতা।
আইসিডিডিআরবির প্রকল্পের সমন্বয়ক মো. তৌফিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেক মানুষ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে যক্ষ্মা পরীক্ষা করাতে অস্বস্তি বোধ করেন। তাঁরা আমাদের এই তিনটি কেন্দ্রে আসছেন। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের শনাক্ত হওয়া এবং চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের হিসাব আমরা রাখি। এতে তাঁদের ফলোআপ চিকিৎসা নিশ্চিত হচ্ছে।’ জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে তাঁরা তথ্য বিনিময় ও কাজের সমন্বয় করছেন বলেও তিনি জানালেন।
খোলার পর ছয় হাজারের বেশি মানুষ এসব কেন্দ্রে যক্ষ্মা পরীক্ষার জন্য এসেছে। হিসাবে দেখা গেছে, এদের ৭৫ শতাংশ এসেছে বেসরকারি খাতের চিকিৎসকদের পরামর্শে। অন্যরা এসেছে কেন্দ্র থেকে সেবা নেওয়া অন্য মানুষের পরামর্শে।
কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছেন, পরীক্ষা করাতে আসা প্রত্যেক রোগীর মুঠোফোন নম্বর রাখা হয়। যক্ষ্মা শনাক্ত হলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের ফোন করা হয়, তারা নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করছে কি না, তা জানার জন্য।