যশোরে মাঠকে মাঠ মসুরখেতে গোড়া পচা রোগ
কৃষক তরিকুল ইসলাম গত মৌসুমে চার বিঘা জমিতে মসুরের চাষ করেছিলেন। মসুর পেয়েছিলেন প্রায় ১৭ মণ। এবারও তিনি চার বিঘা জমিতে মসুরের চাষ করেছেন। গোড়া পচা রোগে এবার তাঁর মসুরখেতের অবস্থা খারাপ।
ফলন নিয়ে চিন্তিত যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ইন্দ্রা গ্রামের এক কৃষক বললেন, ‘গত মৌসুমে একই খেতে সরিষার সঙ্গে মসুরের চাষ করেছিলাম। এবার শুধু মসুর বুনেছিলাম, আশা ছিল বেশি ফলন পাব। কিন্তু গোড়া পচা রোগে প্রতিদিন গাছ মরছে। ইতিমধ্যে আমার খেতের ৫০ ভাগ গাছ মরে গেছে।’
মসুরখেতে ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও প্রতিকার পাননি মনিরামপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কৃষক পলাশ মল্লিক। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যাওয়া পলাশ বললেন, ‘তিন বিঘা জমিতে এবার মসুরের চাষ করেছি। পচন রোগে গাছ মরে খেত ফাঁকা হয়ে গেছে। ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।’
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, যশোর জেলার মাটি ও আবহাওয়া মসুর চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তবে এ বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বৃষ্টি ছিল। এ কারণে মাটিতে রস বেশি থাকায় মসুর গাছে গোড়া পচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে কী পরিমাণ জমিতে এই রোগ দেখা দিয়েছে, তার কোনো তথ্য এই মুহূর্তে তাঁদের হাতে নেই। আক্রান্ত জমির পরিমাণ জানাতে জেলার আট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
৭ ও ৯ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, খেতের মধ্যে মাঝে মাঝে মসুরগাছ শুকিয়ে আছে। আবার অনেক জায়গায় শুকিয়ে যাওয়া গাছ কৃষকেরা তুলে ফেলায় ফাঁকা হয়ে আছে।
কৃষকেরা বলছেন, গাছ একটু বড় হওয়ার পর এই রোগ দেখা দেয়। খেতের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় প্রথমে গাছের শিকড় পচে যাচ্ছে। এরপর গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতে ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
অভয়নগরের বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম শেখ বলেন, গোড়া পচা রোগে তাঁর দেড় বিঘা জমির বিভিন্ন স্থানে মসুরের গাছ মরে ফাঁকা হয়ে গেছে। এখন আর খেতে যেতে ইচ্ছা করে না।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় মসুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছিল ১৯ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১৮ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন মসুর। এবার জেলায় মসুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৪ হাজার ৯৫৪ মেট্রিক টন। কিন্তু এবার মসুরের চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় ২ হাজার ২০ হেক্টর, কেশবপুর উপজেলায় ৩৮৫, মনিরামপুর উপজেলায় ৪ হাজার ১৭৫, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৩৫০, অভয়নগর উপজেলায় ২২৫, চৌগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৪৮০, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২ হাজার ৭০০ এবং শার্শা উপজেলায় ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমি। মূলত কয়েকটি বারি জাতের মসুরের চাষ এই জেলায় জনপ্রিয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সুব্রত চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, এবার মসুরের বীজ বপনের সময় বৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণে আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। আর খেতে রস বেশি থাকায় গাছের গোড়ায় ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। এতে শিকড় পচে যায়। খাবার নিতে না পারায় গাছ প্রথমে হলুদ এবং পরে শুকিয়ে যায়। তবে তিনি বলেন, খেতে শুকিয়ে যাওয়া গাছের পাশের ভালো গাছগুলো ফাঁকা জায়গায় শাখা-প্রশাখা সম্প্রসারণ করছে। এতে শেষ পর্যন্ত মসুরের উৎপাদন খুব বেশি খারাপ হবে না।