যাত্রাবাড়ী-মিরপুর-উত্তরায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি

এডিস মশা
ফাইল ছবি

ডেঙ্গু দিনদিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে যাত্রাবাড়ীতে। মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ৮ দশমিক ২০ শতাংশই যাত্রাবাড়ীর। তারপর মিরপুর ও উত্তরায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। আজ রোববার দুপুরে এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

‘মনসুন এডিস সার্ভে ২০২১ অ্যান্ড কারেন্ট সিচুয়েশন অব ডেঙ্গু’ শীর্ষক জরিপের তথ্য তুলে ধরেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরার পর ধারাবাহিকভাবে বাসাবো, রামপুরা, খিলগাঁও, মুগদা, ওয়ারী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ও পল্টনে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রামপুরা, উত্তরা, মিরপুর, বনশ্রী, বসুন্ধরা, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বারিধারা, দক্ষিণখান এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী, মতিঝিল, মুগদা, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী, পল্টন, টিকাটুলী, গেন্ডারিয়া, শাহজাদপুর এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।

জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬টি সাইটে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০টি সাইটে এডিসের লার্ভার বেশি উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জরিপকালে ৩ হাজার ৪১২টি গৃহস্থালিতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি এবং ৫৮৮টি গৃহস্থালিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে। নির্মাণাধীন ভবনেও উল্লেখযোগ্যভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে ১০ দিন জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বছর জুন, জুলাই ও আগস্টে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে আগস্টে। ২০২০ সালের আগস্টে ৫৬২ জন আক্রান্ত ছিল, এবার এখন পর্যন্ত আগস্টে ৫ হাজার ৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

কিছু সুপারিশ তুলে ধরে আফসারা আলমগীর খান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনা, যাতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে। এ ছাড়া বরাদ্দ বাড়িয়ে সারা বছর এডিস মশা নিধনের কাজ করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নজরদারি করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেই সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনাও জোরদার করা দরকার।

নগরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলেও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে গ্রামাঞ্চলে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। এখন দেখতে পারছি, গ্রামাঞ্চলেও অনেক ডেঙ্গু রোগী। এর কারণ হলো নগরায়ণ এখন গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে। এসব জায়গার বাসাবাড়িতে এসি, ফ্রিজ আছে। নগরায়ণের জন্য এডিস মশার বংশ বেড়ে যাচ্ছে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, লকডাউনের কারণে অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। সেখানে জমে থাকা পানি থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এখন সেগুলোর কাজ শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সেখান থেকে ডেঙ্গু নির্মূল করা হচ্ছে। আর প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোয় উল্লেখযোগ্যভাবে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে।