যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ

চট্টগ্রামের বায়ু দূষিত হচ্ছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় । পরিবেশ অধিদপ্তর নগরের বিভিন্ন স্থানের বাতাস পরীক্ষা করে বায়ুদূষণের প্রমাণ পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো ধোঁয়ার সঙ্গে বস্তুকণা, সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চট্টগ্রামের বাতাস দ্রুত দূষিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কালো ধোঁয়ায় থাকা বস্তুকণা ও সালফার ডাই অক্সাইডের প্রভাবে ফুসফুস, কিডনি জটিলতা ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও সিসার কারণে শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তি ব্যাহত হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর নগরের বিভিন্ন স্থানের ২৪টি নমুনা সংগ্রহ করে বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করেছে। এসব পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাতাসে সাসপেনডেট পার্টিকুলেট মেটারের (এসপিএম) মাত্রা বেশি। পাশাপাশি বাতাসে অক্সাইড অব নাইট্রোজেন এবং অক্সাইড অব সালফারও মাত্রা অতিক্রম করেছে।
সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু পাওয়া গেছে নগরের ষোলশহর, এ কে খান গেট এলাকায়। এ কে খানে প্রতি মাইক্রোগ্রাম বাতাসে এসপিএম পাওয়া গেছে ৩০২। ষোলশহরে তা ৩০৫। এসপিএমের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হচ্ছে ২০০-এর নিচে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ষোলশহর, এ কে খান, কালুরঘাট, নাসিরাবাদ, সীতাকুণ্ডের মতো শিল্প এলাকার বাতাস সব সময় বেশি দূষিত থাকে। কলকারখানার কালো ধোঁয়া এর জন্য দায়ী।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্থানের বাতাস পরীক্ষা করে দূষণের প্রমাণ পেয়েছি। শিল্প এলাকায় দূষণ একটু বেশি। কলকারখানার ধোঁয়া এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন দূষণের জন্য মূলত দায়ী। অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি কারখানাগুলোকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করে থাকে।’
২০০৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর নগরের ১০২টি কারখানায় জরিপ চালিয়েছিল। তাতে দেখা যায়, ৬৫টি ছাড়া বাকিগুলো কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ দূষণ করছে। অধিদপ্তর দূষণের সঙ্গে জড়িতদের নোটিশ দিয়েছিল।
সূত্রে জানা গেছে, নগরের কালুরঘাট শিল্প এলাকা, নাসিরাবাদ, ষোলশহর, এ কে খান, বায়েজিদ এলাকায় কমপক্ষে ২০০ ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বায়ু দূষণ করছে। এ ছাড়া, মাইজ্জ্যার টেক ও সীতাকুণ্ডসহ আরও বেশ কিছু কলকারখানা বায়ু দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রায় দেড় লাখ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি ফিটনেসবিহীন। এসব যানবাহন বায়ু দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কোনো অভিযানও চোখে পড়ে না। আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে গাড়ির কালো ধোঁয়া পরীক্ষা করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এতে দূষণ বাড়ছে।