যারা বই প্রকাশের জন্য মানুষ হত্যা করে, তারা সমাজ-রাষ্ট্রের শত্রু: আদালত

আদালত
প্রতীকী ছবি

‘যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু।

ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাপ্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারী অপরাধীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে। অভিযুক্ত আসামিরা আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যাপ্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করেছে, সে জন্য তাদের একই সাজা দেওয়া বাঞ্ছনীয়। মামলার সকল আসামির সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং এটা হবে একটা দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি।’

জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই মন্তব্য করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেছেন, ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে একদিকে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়রা মানসিক শান্তি পাবেন, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে অন্যরা ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে। প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার কারণ সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপনকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তাঁর মূল কাজ ছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মূল হত্যাকারীদের অর্থায়ন করা। আর দীপন হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামি আকরাম হোসেন।

ফয়সল আরেফিন দীপন
ফাইল ছবি

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামি মইনুল হাসান শামিম অস্ত্র সংগ্রহ করেন। আসামি মোজাম্মেল হোসেন দীপন হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করে ঘটনাস্থল রেকি করে আসেন। হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসামি শেখ আবদুল্লাহ। এই আসামিদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল ব্লগার, প্রকাশক ও সমকামীদের হত্যার অংশ হিসেবে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা। রায়ে বলা হয়, জিহাদের অংশ হিসেবেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া।

মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা আর এসব উদ্দেশ্যই হলো মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেওয়া। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করে দেওয়াই ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের লক্ষ্য।

জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় আজ বুধবার দুপুরে আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামি হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির, আবদুস সবুর ওরফে আবদুস সামাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল রিফাত, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব সাজিদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের, চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব। তাঁদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগ এলাকার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে ফয়সল আরেফিন দীপনকে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা অফিসের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।