রক্তিম চোখ মেলে তাকাবেন, সেই আশায় স্বজনেরা

রক্তিম সুশীল

শয্যার সঙ্গে লেপ্টে আছে রক্তিম সুশীলের শরীর। নীরব–নিথর। ১২ দিন ধরে এভাবেই পড়ে আছেন তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সংজ্ঞাহীন রক্তিম একটু চোখ মেলে তাকাবেন, এমন একটি দিনের আশায় স্ত্রী সুমনা শর্মাসহ স্বজনেরা।

৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপের ধাক্কায় রক্তিম গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় তাঁর পাঁচ ভাই মারা যান। আহত হন রক্তিম ও আরও দুই ভাইবোন। বোন হীরা সুশীল ডুলাহাজারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছোট ভাই প্লাবন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

আহত রক্তিমকে প্রথমে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

৮ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালে আছেন সুমনা শর্মা। এখন তাঁর দিন–রাত কাটছে চমেক হাসপাতালের আইসিইউর বাইরের বারান্দায়।

সুমনা শর্মা গতকাল শনিবার বলেন, ‘চিকিৎসকেরা কোনো আশা দিচ্ছেন না। শুধু বলেন অবস্থা তেমন ভালো নয়। সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে বলেন।’

দুর্ঘটনায় রক্তিমের পা, হাত ও পাঁজর ভেঙে গেছে। আঘাত রয়েছে মাথায়ও। দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি আইসিইউতে আছেন। লাইফ সাপোর্টে থাকা রক্তিমের তাঁর জ্ঞান ফেরেনি এখনো।

চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল কাদের বলেন, তাঁর অবস্থা আগের মতো। লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অন্য কোনো চিকিৎসা আপাতত দেওয়া যাবে না। মাথার ইনজুরির জন্য ওষুধ চলছে। হাত–পা ও বুকের হাড়ের ভাঙাগুলোর চিকিৎসা জ্ঞান ফিরলে দেওয়া হবে।

স্ত্রী সুমনা বারান্দা থেকে মাঝেমধ্যে ভেতরে গিয়ে রক্তিমকে দেখে আসেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে সাড়ে তিন বছরের ঋদ্ধি সুশীল বাবাকে দেখার জন্য ব্যাকুল। হাসপাতাল থেকে মাঝেমধ্যে তাকে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। ‘সে বাবাকে দেখতে চায়। তাকে কী বলব আমরা।’—বললেন সুমনা।

ছেলেকে দেখার জন্য মালুমঘাট থেকে গত শুক্রবার চট্টগ্রামে আসেন রক্তিমের মা মানু রানী সুশীল। সদ্য স্বামী ও পাঁচ ছেলেকে হারানো মানু রানী শুক্রবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে দেখেছেন। নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন কিছুক্ষণ। মানু রানী বলেন, ‘পরান মানে না। রক্তিমকে দেখতে ছুটে এসেছি। ভগবানকে ডাকছি শুধু।’ তিনি বলেন, ‘বিপদ আমাদের পিছু ছাড়ছে না। আজ (গতকাল) আমার মেয়ের জামাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।’

রক্তিমের ছোট বোন মুন্নীর স্বামী খগেশপতি চন্দ্র গতকাল বান্দরবানের আলীকদম তালাগুলিয়া এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। তাঁর ঠোঁট ও হাতে সেলাই পড়েছে। তিনি বর্তমানে আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

রক্তিমেরা আট ভাই। এর মধ্যে পাঁচজন ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনায় মারা যান। এর বছর দুয়েক আগে অপর এক ভাই অসুস্থ হয়ে মারা যান। সবার ছোট প্লাবন এবার এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে প্লাবন বাড়ি ফিরেছেন।

চোখের সামনে এমন একটি ঘটনা দেখে প্লাবন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে জানালেন স্বজনেরা। কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না। গাড়ি দেখলেই চিৎকার করে ওঠেন প্লাবন, ‘এই মেরে দিচ্ছে, মেরে দিচ্ছে।’

আরও পড়ুন