রক্ত দিতে গভীর রাতে ছুটলেন তাঁরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী গভীর রাতে হাসপাতালে যান। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন রক্ত দিয়েছেন।

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের জন্য নির্দেশনাসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে এক ব্যক্তি। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে।
ছবি: প্রথম আলো

খবরটি প্রথমে ফেসবুকে দেখেন মাহমুদুল হাসান। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে ১১টার ঘরে। এর মধ্যে চাউর হয়, বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের জন্য জরুরি রক্ত দরকার। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আহত ব্যক্তিরা। এটি দেখার পর তিনি যোগাযোগ করেন বন্ধুদের সঙ্গে। গভীর রাতে ৮ থেকে ১০ জন মিলে রওনা দেন নগরের উদ্দেশে।

ক্যাম্পাস থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। মাহমুদুলরা এসে পৌঁছান রাত দুইটার দিকে। তখন হাসপাতালজুড়ে হাজারো মানুষের ভিড়। স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসকদের ছোটাছুটি। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে হাজির হচ্ছিল হাসপাতালে। নামানো হচ্ছিল হতাহতদের। অনেকেরই রক্তের প্রয়োজন পড়ছিল। মাহমুদুলরা চলে যান রক্ত দেওয়ার কেন্দ্রে। আহত ব্যক্তিদের জন্য দেন ব্যাগের পর ব্যাগ রক্ত।

মাহমুদুল প্রথম আলোকে বলেন, এক ভয়াবহ রাত পার করেছেন তাঁরা। এত মানুষের আর্তনাদ আগে শোনেননি কখনো। এমন ঘটনারও সাক্ষী হননি তাঁরা কেউ। মানবিক কারণেই তাঁরা হাজির হয়েছিলেন হাসপাতালে।

অবশ্য শুধু মাহমুদুল নন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী গভীর রাতে হাসপাতালে যান। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন রক্ত দিয়েছেন। বাকিদের রক্ত দিতে হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বাইরেও অনেকে রক্ত দিতে হাসপাতালে যান। তাঁদের কেউ কেউ রক্তের গ্রুপ প্ল্যাকার্ডে লিখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনই একজন আবদুর রশীদ। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ফেসবুকে খবর পেয়ে তিনিও হাজির হন হাসপাতালে। রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্স থেকে বেডে পাঠিয়ে দেওয়ার কাজও করেন।

আবদুর রশীদ বললেন, সীতাকুণ্ডে জ্বলে ওঠা আগুনের ধোঁয়া যেন চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে এসে পৌঁছেছে। আহত ব্যক্তিদের চিৎকার আর স্বজনের আহাজারিতে রাতেই ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল। ফেসবুক, টেলিভিশন আর অনলাইন পত্রিকায় একের পর এক খবর চলছিল। এসব খবর দেখে আর ঘরে বসে থাকেননি তিনি। ছুটে আসেন হাসপাতালে।

শিক্ষার্থীদের বাইরেও নানা সংগঠনের সদস্যরা হাসপাতালে যান। তাঁদের মধ্যে আছে প্রথম আলো বন্ধুসভা, রেড ক্রিসেন্টের বিভিন্ন ইউনিট, মহা মৃত্যুঞ্জয় ফাউন্ডেশন, বিডি ক্লিন আপ, আল মানাহীল। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ নানা সংগঠনও হাসপাতালে রোগীদের ওষুধ ও খাবার দিয়ে সহায়তা করেছে। ‘কোন প্রকার ওষুধ প্রয়োজন হলে বলুন’ লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান আদনান আহমেদ নামের এক যুবক। গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন। বাসায় কেক কাটার কথাও ছিল তাঁর। কিন্তু বিস্ফোরণের ঘটনা জেনে তিনি এই অনুষ্ঠান বাদ দেন। পরে নিজের জমানো টাকায় ওষুধ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।