রপ্তানির পথে বাধা ও উত্তরণের উপায়
>৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, প্রথম আলো ও ক্রাউন সিমেন্টের আয়োজনে ‘রপ্তানির পথে বাধা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস রপ্তানি বাণিজ্য। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য রপ্তানি বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা বাধা। এ জন্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এ বাণিজ্য হচ্ছে না।
রপ্তানির বাধাগুলো দূর করতে পারলে বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। এ ছাড়া নতুন রপ্তানি খাতের সুযোগ সৃষ্টি এবং নতুন পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে আজ আলোচনা হবে। এখন আলোচনা করবেন শুভাশীষ বসু।
শুভাশীষ বসু: গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পোশাকশিল্পের রপ্তানি হলো প্রায় ৮২ শতাংশ। পোশাক খাত আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
আমাদের জিডিপির আকার হলো ২২৩ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি খাতের অবদান হলো ১৫ শতাংশের বেশি। এটা হয়তো আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। তবে সমস্যা হলো, আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও বাজারের অভাব।
গত অর্থবছরে ৭৪৪টি রপ্তানি পণ্যের মাত্র ছয়টি থেকে রপ্তানি আয় হলো ৯২ শতাংশ। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, প্রায় সব রপ্তানি আয় নির্ভর করছে মাত্র ছয়টি পণ্যের ওপর।

পণ্যের পাশাপাশি আমাদের সেবাও রপ্তানি করতে হবে। রপ্তানিকারক দেশের বিভিন্ন নীতির জন্য দ্রব্যের মূল্যের অনেক ওঠানামা করে। কিন্তু সেবা খাতে এটার সম্ভাবনা খুব কম। বিভিন্ন কারণে বিশ্ববাজারে রপ্তানি পণ্যের মূল্য কমে যাচ্ছে।
এখন আমাদের প্রয়োজন রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো। এর জন্য দরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। চীন, জাপান, ভারত—তাদের কিছু বিশেষ জোন দেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ডে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৩০০ ইউএস ডলার। আমাদের দেশে শ্রমিকের মজুরি মাত্র ৭০ ইউএস ডলার। আমাদের পণ্য উৎপাদন যথেষ্ট খরচ-সাশ্রয়ী।
দেশের পোশাকশিল্প এত বড়, তারপরও আমাদের ব্র্যান্ডিং নেই। এ জন্য পোশাকের মূল্য নির্ধারণে আমাদের ভূমিকা থাকে না। এ দেশের বায়িং হাউসগুলো পোশাকের যে মূল্য নির্ধারণ করে, সেটাই নিতে হয়।
এরা আমাদের শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খরচ জেনে একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সেটাই আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। আমাদের পোশাকের ব্র্যান্ডিং হলে মূল্য নির্ধারণের এই সমস্যা থাকবে না বলে আশা করি।
আমাদের সাইকেল বিভিন্ন দেশে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, কাঁচামাল বাইরে থেকে আনতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের জন্য পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটা বাস্তবায়িত হলে পোশাকশিল্পের পরই এর অবস্থান হবে।
দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণের পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। জাহাজনির্মাণশিল্পের উন্নয়ন হচ্ছে। এশিয়াসহ ইউরোপেও আমরা জাহাজ রপ্তানি করছি। খুব সম্প্রতি আমরা ভারতে ৩০টি জাহাজ রপ্তানি করব।
এসব ক্ষেত্রে মূলধন একটা সমস্যা। আমাদের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এখন সহজ শর্তে ঋণের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আমাদের ক্যাটস আই, ইয়োলোসহ আরও কিছু ব্র্যান্ড আছে। এগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় করা প্রয়োজন।
বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে রপ্তানিকে সম্প্রসারণ করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই মিলে কাজ করলে এসব লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
মো. সিদ্দিকুর রহমান: রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ পোশাকশিল্প থেকে আসে। আমরা সবাই চাই পোশাক ছাড়া আরও বেশি পণ্য দেশ থেকে রপ্তানি হোক। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আসুক। কিন্তু বাধা কোথায়? প্রধান বাধা হলো ব্যাংক সুদ। যে পরিমাণ সুদ দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়, এই সুদে কারও পক্ষে শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এটা হলো নতুন শিল্প গড়ে তোলার প্রথম বাধা।
দ্বিতীয় বাধা হলো, অবকাঠামোগত উন্নয়নে ধীর গতি। কখনো কখনো ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় লাগে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটের গুরুত্ব আছে। তা না হলে বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

তিন-চার বছর ধরে বিদ্যুতের সমস্যা চলছে। এখন যদিও এ সমস্যা তেমন নেই। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইন করা নেই। ফলে প্রয়োজন থাকলেও ডিস্ট্রিবিউশন লাইন না থাকায় বিদু্যৎ ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ চাইলে বলবে, ফিডার লাইনে লোড নেওয়ার মতো ক্যাপাসিটি নেই। বিদ্যুৎ যদি না থাকে, তাহলে শিল্প বাড়বে কীভাবে? ২০০৫ সালে পোশাকশিল্প ছিল ট্যাক্স হলিডে। এ সময়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ সোর্স ট্যাক্স দিতে হতো।
২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমাদের করপোরেট ট্যাক্স ছিল ১০ শতাংশ। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে করপোরেট ট্যাক্স করা হলো ৩৫ শতাংশ। এ দেশের পোশাকশিল্প কি এত করপোরেট ট্যাক্স দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে? এত ট্যাক্স দিয়ে কেউ বিনিয়োগ করতে পারবে? অনেক আলোচনার পর এটা ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
টেক্সটাইল খাতে করপোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ। গত ১৫ বছরে আমেরিকার বাজারে ৪০ শতাংশ মূল্য কমেছে। এদিকে সোর্স ট্যাক্স, করপোরেট ট্যাক্স, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের বেতন—সবই বেড়ে যাচ্ছে, এভাবে ব্যবসা করব কীভাবে?
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না। পণ্য ডেলিভারি দিতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যায়, যেখানে এক ঘণ্টা দেরি হলে পণ্য বিমানে পাঠাতে হয়। যখন ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতাম, তখনো যে সক্ষমতা, আজ ৩৪ বিলিয়ন ডলারে সেই একই সক্ষমতা। ২০০৯ সাল থেকে সক্ষমতা বাড়ানোর কথা শুনছি।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে এ দেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে চান। এ জন্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন ৬০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাতের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। সুযোগ-সুবিধা পেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
মীর নাসির হোসেন: বাংলাদেশ থেকে ৭৪৪টি পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে পোশাকশিল্পের পণ্যসহ ছয়টি পণ্য প্রধান। আজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু যেকোনো সংকটে এর মালিকদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন এঁরা চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত।
পোশাকশিল্প অনেক আর্থিক সুবিধা ভোগ করে। তাদের হয়তো আরও দাবিদাওয়া আছে। এসব দাবি যৌক্তিক। এখন ছয়টি রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আটকে আছি। এর কারণ হলো, পোশাকশিল্প যে আর্থিক সুবিধা পায়, অন্যরা সেটা পায় না। অন্য শিল্পের জন্যও আর্থিক সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে অন্য শিল্প কোনোভাবে বাড়বে না।

অন্য শিল্পের প্রতি একটা বিমাতাসুলভ আচরণ রয়েছে বলে মনে করি। এটা অবশ্যই নিরসন করা জরুরি। সব রপ্তানি পণ্যকে একটা মানদণ্ডে আনতে হবে। এখন জাতীয় অর্থনীতিতে সেবা খাতের অবদান ৪৫ শতাংশ। ভবিষ্যতে সেবা খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
করপোরেট ট্যাক্স তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ৩৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ। পোশাকশিল্পের জন্য ২০ শতাংশ। এত ভিন্নতা না রেখে সবকিছুর মধ্যে একটা সমতা আনা প্রয়োজন।
রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন ও যৌক্তিক মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। আমাদের উৎপাদনের জন্য মানবসম্পদ আছে কিন্তু মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টে মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তারপরও শিল্পের প্রয়োজনের ভিত্তিতে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না।
আমরা রপ্তানি করি ৩৪ বিলিয়ন ডলার, এর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টের জন্য। অন্য দেশের জনশক্তি দিয়ে মিড লেভেল ম্যানেজমেন্ট চালাতে হয়। আমাদের নীতি প্রণয়নে এসব বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। ব্র্যান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় কিন্তু আমাদের পোশাকের নিজস্ব কোনো ব্র্যান্ড নেই। টরন্টোতে অ্যাপেক্সের জুতা কিনেছি অন্য ব্র্যান্ডে। এ ক্ষেত্রে প্রাণ অসাধারণ কাজ করেছে। কমপক্ষে এই উপমহাদেশে তারা একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছে। রপ্তানিতে সমৃদ্ধি আনতে হলে এখনো আমাদের অনেক বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
মো. হাবিবুর রহমান মোল্লাহ: ২০০১ সাল থেকে ক্রাউন সিমেন্ট উৎপাদিত হচ্ছে। ৬০০ মেট্রিক টন উৎপাদন দিয়ে শুরু করি। এখন উৎপাদনের ক্যাপাসিটি ৬ হাজার মেট্রিক টন। আগামী জুলাই নাগাদ আমাদের সিমেন্ট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন।
দেশের পাঁচটি বড় সিমেন্ট কোম্পানির মধ্যে ক্রাউন সিমেন্ট একটি। প্রতিবছর দেশে সিমেন্টের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর সম্পূর্ণই দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। ১০ বছর ধরে আমরা সিমেন্ট রপ্তানি করছি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মিয়ানমার ও নেপালের কিছু এলাকায় সিমেন্ট রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েক বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলারের সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির পরিমাণ খুব কম হলেও সিমেন্ট যে রপ্তানি করা যায়, সেটা প্রতিষ্ঠিত করা গেছে। যদিও সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, তারপরও আমাদের জনশক্তি, পরিবহন—সব মিলিয়ে মূল্য সংযোজন হয়।

ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে সড়কপথে সিমেন্ট রপ্তানি করছি। ত্রিপুরার অনেক বড় বড় প্রকল্পে ক্রাউন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরার উড়ালসড়ক ও বাংলাদেশের উড়ালসড়কে নিয়মিত আমাদের সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমরা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। ব্র্যান্ডিং হলে মানুষের কাছে যেমন পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে, তেমনি আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। আমরা পণ্যের মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিই না।
ভারতে সিমেন্ট রপ্তানির বড় অসুবিধা হলো, তাদের ল্যাবে সিমেন্ট পরীক্ষা করতে সময় লাগে পাঁচ মাস। কিন্তু ভারতের পণ্য কোনো পরীক্ষা ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের বিএসটিআইয়ের (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) সার্টিফিকেট যদি ভারত গ্রহণ করে, তাহলে অনেক সুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
২০১৩ সাল পর্যন্ত সরাসরি আমাদের ট্রাক থেকে ভারতের ট্রাকে সিমেন্ট বোঝাই করা হতো। এখন সীমান্তের গুদামঘরে নামাতে হয়, কাস্টমসের কাজ সারতে হয়, তারপর ভারতের ট্রাকে পণ্য ওঠে। এতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
কোনো কারণে ওদের বন্ধের দিন পড়লে সময় আরও বেশি লাগে এবং খরচ আরও অনেক বেশি হয়। আরও কিছু অসুবিধা আছে। এসব সমস্যা দূর করতে পারলে অনেক বেশি সিমেন্ট রপ্তানি করতে পারব আমরা।
ফজলুল হক: পোশাকশিল্প থেকে কত বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হলো, জিডিপিতে কত শতাংশ অবদান—এটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। পোশাকশিল্পে অবদান আরও অনেক ব্যাপক। গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা যে পাল্টে গেছে, এর পেছনে বড় অবদান হলো পোশাকশিল্পের।
আজ ভারতের অনেক মানুষের কাছে বিস্ময়, আমরা কীভাবে তাদের থেকে এগিয়ে আছি। ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে যে ধরনের পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন, তেমন কোনো পরিকল্পনা কিন্তু নেই।
সরকার তিন দশক ধরে আমাদের সাহায্য করছে। কিন্তু এর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো প্রতিবছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। এর পেছনে ন্যূনতম কোনো পরিকল্পনা নেই, ভাবনাচিন্তা নেই। আধা ঘণ্টার একটা সভা হয়। গত বছর এত হয়েছিল, এবার এত হতে পারে। কিছু সময় কথা বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ শেষ।

যখন কোনো লক্ষ্যমাত্রার সঠিক ভিত্তি থাকে না, তখন সেটা পূরণের গুরুত্ব থাকে না। বিদেশের মিশনগুলোকে রপ্তানির লক্ষ্য দেওয়া হয়। অনেকে জানেই না, তাকে কী লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। এসব লক্ষ্যপূরণের কোনো বাজেটও তাদের দেওয়া হয় না। ফলে মিশনগুলোর এ বিষয়ে কোনো উৎসাহ, আগ্রহ থাকে বলে মনে হয় না।
কোনো ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে হলে তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা থাকে। আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করব। অথচ এর জন্য কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকবে না, তা তো হতে পারে না। ভারতের মতো দেশ ২০১৮ সালে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্যও আমাদের ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
সরকার আমাদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু আমরা চাই একটা সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সহযোগিতা হোক। আজ ভারত পোশাকশিল্পে আমাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একসময় ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার—সবাই ঘোষণা দেবে। এখন তীব্র প্রতিযোগিতার যুগ। এ ক্ষেত্রে কার্যকর পরিকল্পনা না থাকলে এগিয়ে যেতে পারব না।
আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাধার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ছোট বাধাগুলোর কথা বাদই দিলাম, বড় বাধাগুলো দূর করার জন্য যেন আমাদের গঠনমূলক পরিকল্পনা থাকে।
জাকির হোসেন: রপ্তানির বাধাগুলো কমবেশি আমরা সবাই জানি। রপ্তানিতে দেশি-বিদেশি দুই ধরনের বাধা রয়েছে। দেশি বাধা দূর করার জন্য অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে কমবেশি কাজ হচ্ছে। কিন্তু এ কাজ আরও জোরদারভাবে করা প্রয়োজন।

পত্রিকা, টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে রপ্তানি নিয়ে অনেক প্রতিবেদন হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে তথ্য পাই, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকেও পর্যাপ্ত তথ্য পেতে চাই। বাজার বৈচিত্র্যকরণ ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে ইপিবির দায়িত্ব রয়েছে।
আমরা স্বল্প আয়ের দেশ হিসেবে আজ যে সুবিধা পাচ্ছি, এটা আমাদের জন্য একটা প্রণোদনা। উন্নয়নশীল দেশ হলে এ সুবিধা পাব না। এ সময়ও বেশি নেই। তাহলে এ পরিস্থিতির জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। রানা প্লাজা ধসের পর মনে করা হয়েছিল, পোশাক খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু সেটা আসেনি। গত বছরের তুলনায় আমাদের চামড়া ও হিমায়িত মাছের রপ্তানি কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
আমাদের এখন দুটো বিষয় ভাবতে হবে। এক. রপ্তানির বাধা দূর করার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। দুই. উন্নয়নশীল দেশ হলে যে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব, তার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
আ. বারিক খান: স্বাধীনতার পর পাটই ছিল একমাত্র প্রধান রপ্তানি পণ্য। এখন আর পাটের সেই অতীত ঐতিহ্য নেই। পাটের সরকারি ও বেসরকারি দুটো খাত আছে। সরকারি খাত যেভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, বেসরকারি খাত সেভাবে করে না।
৮৩ শতাংশ পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বেসরকারি খাত। এরপরও পাট খাতের অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধা সরকারি খাত ভোগ করে। এ জন্য পাট খাতের তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না।

এ খাতের আরও একটি বড় সমস্যা হলো এর যন্ত্রপাতিগুলো অনেক পুরোনো আমলের। এগুলো পরিবর্তন করা জরুরি। তিন দিক থেকে উদ্যোগ নিলে পােটর যন্ত্রপাতি পরিবর্তন খুব সহজ হবে। যেমন যন্ত্রপাতির মূল্যের এক ভাগ দেবে সরকার, এক ভাগ দেবে কারখানার মালিক, আর এক ভাগ আসবে পুরোনো যন্ত্রপাতি বিক্রয় থেকে। তাহলে খুব সহজেই পুরোনো যন্ত্রপাতি সরিয়ে নতুন যন্ত্রপাতি বসানো যাবে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাটের উন্নয়নে, বিশেষ করে পাটের বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করি। পাট খাতের ব্যবসায়ীদের উচ্চ হারে ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। ফলে আয়ের সিংহ ভাগই ব্যাংকে দিতে হয়।
আমরা কেন রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সুযোগ পাব না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। যারা রপ্তানি করে, তাদের সবার মধ্যে সমন্বিতভাবে এ তহবিল দেওয়ার জন্য জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি বন্দর আছে। সরকারি বন্দর খালি থাকলেও অনেক জাহাজ এই বন্দরে ভিড়তে পারে না, বেসরকারি বন্দরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটা কেন হবে? যে বন্দর খালি থাকবে, সেখানেই জাহাজ ভিড়বে। এসব বিষয় দেখা প্রয়োজন।
আবদুস সালাম মুর্শেদী: আন্তর্জাতিকভাবে পণ্যের দাম কমেছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের দেশের ঘটনা অনেক বেশি প্রচার পায়। ক্রেতারা এগুলো পণ্যের মূল্য কমানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
বিভিন্ন সংস্থা পোশাকশিল্পের উন্নয়নের জন্য ১ শতাংশেরও কম সুদে ঋণ দেয়। কিন্তু এই তহবিলের ওপরও আমাদের ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদ দিতে হয়। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল আসে দেশের বাইরে থেকে। অথচ এর ওপরও বাংলাদেশ ব্যাংক দেড় থেকে ২ শতাংশ সুদ নেয়। এই তহবিলের ওপর আমাদের সুদ পড়ে যায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ।
১৫ দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ আরেকটি জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা ঠিক করার সক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের নেই। এখন সিঙ্গাপুর থেকে ঠিক করে আনতে হবে। প্রায় ৪০টি পোশাকশিল্পের পোশাক এই জাহাজে আছে। এসব ব্যবসায়ীর অবস্থা কী হবে, একবার চিন্তা করতে পারেন? অনেক ছোট ব্যবসায়ী এসব কারণে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। এখান থেকে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে যে আগামী দুই বছরে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত করব।

বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর করে দেশি বিনিয়োগের ওপর। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশি বিনিয়োগ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ হবে না। প্রতি মাসেই ঋণখেলাপি বাড়ছে। এর অর্থ ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়।
আন্তর্জাতিকভাবে তেলের দাম কমেছে। অন্যান্য দেশ সমন্বয় করছে। তেলের দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই দেশে। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো যে ক্ষেত্রে সমন্বয় করে, আমাদেরও সেভাবে করতে হবে। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নয়ন করতে পারব না।
সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয় ইংল্যান্ডে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ইংল্যান্ড বেরিয়ে আসার পর ডলার ও ইউরোর সঙ্গে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে যথাক্রমে ১০ ও ৭ শতাংশ। দেশ থেকে অনেক কাঁকড়া ও কুচিয়া মাছ রপ্তানি হয়। এসব রপ্তানিকারকের অনেক সমস্যা, এদের উৎসাহ ভাতা দেওয়া প্রয়োজন।
দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, রাশিয়া—এসব দেশে অনেক শুল্ক দিয়ে পণ্য পাঠাতে হয়। এ দেশগুলোতে আমাদের কাউন্সিলর অফিস রাখা জরুরি।
রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে আমাদের একটা ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি হয়েছে। এই ইমেজ ধরে রাখতে হলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, সহজ শর্তে তহবিল, ব্যবসাবান্ধব নীতিমালাসহ দীর্ঘমেয়াদি একটি কার্যকর পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
শুভাশীষ বসু: দেশের ইমেজ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সম্মান দেওয়া হয়। রপ্তানিতে যারা ভালো করে, তাদের রপ্তানি ট্রফি দেওয়া হয়। সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়।
বিদেশি তহবিল ডলারে নিলে ৬ শতাংশ সুদ আর টাকায় নিলে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হয়। টাকায় বেশি সুদ নেওয়ার কারণ হলো, যদি টাকার অবমূল্যায়ন হয়, তাহলে এ তহবিল ফেরত দেওয়ার সময় যেন সমস্যা না হয়।
পাটশিল্পের পুরোনো যন্ত্রপাতি বদলাতে হবে। কারণ, কাঁচা পাট থেকে মূল্য সংযোজন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করলে অনেক বেশি মুনাফা হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের ৪০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও সরকার উভয়ে মিলে আলোচনা করলে নিশ্চয়ই একটা সমাধান বের হবে।
ভারতের পণ্য উৎপাদন খরচ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের সরকার সুযোগ-সুবিধা দিলেও সেটা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। ভবিষ্যতে আমরা সবাই মিলে রপ্তানি উন্নয়নে কাজ করলে বাধা অতিক্রম করব।
মোহাম্মদ হাতেম: ২০১০ সালে বোধ হয় পরপর দুবার রপ্তানির ক্ষেত্রে নিটওয়্যার প্রথম হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে কমছে। কারণ, গ্যাসের সমস্যা। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নিটওয়্যার উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি আগের মতো হচ্ছে না।
২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি অনেক কঠিন হবে। ২০১৪ সালে গ্যাসের ক্ষেত্রে তিতাস যে নীতি গ্রহণ করেছে, সেটা শিল্পায়ন–পরিপন্থী নীতি।
প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়—সবাই আমাদের সহযোগিতা করতে চান। তাদের আন্তরিকতা সাহস জোগায়। কিন্তু বাস্তবায়নের পর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কাজগুলো ঠিকভাবে করেন না।

২০০৮ ও ২০০৯ অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারও সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। এই অর্থ গ্রহণ করতে উদ্যোক্তাদের প্রচণ্ড ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
১৯৯৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দেশীয় সুতা ব্যবহারের বিপরীতে ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমেই নিট শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। ১৯৯৭ সালে যেখানে পাঁচ থেকে সাতটি স্পিনিং মিল ছিল, আজ সাড়ে চার শ স্পিনিং মিল। এখন ৮৫ শতাংশ সুতা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে পারছি। আগামী তিন বছরে ৩০ বিলিয়ন রপ্তানি বাড়ানোর জন্য ভারত সরকার উদ্যোগ গ্রহণ কেরছে। বাংলাদেশ সরকার যদি এ ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে, তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব।
বিমানবন্দর থেকে পণ্য হারিয়ে যায়, বাইরে এক মাস পড়ে থেকে নষ্ট হয়, রপ্তানির ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় বাধা আর কী হতে পারে?
মাফরুহা সুলতানা: বাণিজ্যমন্ত্রী প্রতি মাসে বা একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন। এ সভায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় সব বিষয়ই আলোচনায় আসে।
এ কথা ঠিক যে, পোশাকশিল্প সরকারের কাছ থেকে কিছুটা বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু অন্য শিল্পের প্রতিও সরকারের গুরুত্ব রয়েছে। তবে সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও সবার বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

আলোচনায় এসেছে, ভারত সরকার সে দেশের শিল্পের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের সরকারও এসব বিষয় বিবেচনায় নেবে। আজকের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ধাপে ধাপে আলোচনায় আনব।
বর্তমান বাণিজ্যনীতিতে অগ্রাধিকারভিত্তিক, বিশেষ উন্নয়ন ও সেবা খাতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ফোরামে বলছেন, ‘পণ্যের উন্নয়ন, পণ্য ও পণ্যের রপ্তানি বাজারের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’ ২০২১ সালের মধ্যে পোশাকশিল্প ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির জন্য নিশ্চয়ই একটা রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য আমাদের সহযোগিতা থাকবে।
চামড়া, ওষুধ ও অ্যাগ্রো প্রসেসড ফুড খাতের রোডম্যাপ করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। পাট খাত নিয়েও আমরা পরিকল্পনা করছি। গণমাধ্যমের মানুষ বিভিন্ন কারণে আমাদের কাছে আসেন। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পান।
বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে কীভাবে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করা যায়, সে ক্ষেত্রে কাজ করছি। চামড়াশিল্প ২০২১ সালে তাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
রপ্তানি উন্নয়নের জন্য আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমাদের দিক থেকে যত ধরনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন, সেটা করে যাব।
আব্দুল কাইয়ুম: সরকার ২০২১ সালের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আবার সরকারের দিক থেকে রপ্তানির বাধাগুলো দূর করার জন্য জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তাহলে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকবে। সংশ্লিষ্ট সবাই একসঙ্গে কাজ করলে ২০২১ সালের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
শুভাশীষ বসু : মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
মীর নাসির হোসেন : সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই ও চেয়ারম্যান, মীর গ্রুপ
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বিজিএমইএ
আবদুস সালাম মুর্শেদী : সভাপতি, বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
মাফরুহা সুলতানা : ভাইস চেয়ারম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)
আ. বারিক খান : সচিব, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন
মো. হাবিবুর রহমান মোল্লাহ : নির্বাহী পরিচালক, ক্রাউন সিমেন্ট
ফজলুল হক : সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
মোহাম্মদ হাতেম : সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
জাকির হোসেন : বিজনেস এডিটর, সমকাল
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো