রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেই এগিয়ে যেতে হবে

কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে গতকাল প্রদীপ প্রজ্বালন করে ৩৬তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। পাশে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা l প্রথম আলো
কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে গতকাল প্রদীপ প্রজ্বালন করে ৩৬তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। পাশে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা l প্রথম আলো

গান শেষ না করেই কেঁদে ফেলল দশম শ্রেণির কিশোর তন্ময়। গুরু রতন লাল সূত্রধরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেছিল ‘আজি বহিছে বসন্তপবন’ গানটি। ৩৬তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছে তন্ময় কুমার সাহা। সারা দেশ থেকে এসেছে এ রকম অনেকে। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরজুড়ে সেই উজ্জ্বল কিশোর-কিশোরীদের মেলা বসেছিল।

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্বোধন হলো তিন দিনের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন। সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুনের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এর উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। মঙ্গলদীপ জ্বেলে সমবেত কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমণি’ ও বোধনসংগীত ‘সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ’ গেয়ে শুরু হয় সম্মেলন।

সারা দেশে সম্মিলন পরিষদের প্রায় বায়ান্নটি শাখা থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে প্রায় ১৮০ জন। নিজ জেলার প্রতিযোগিতায় টিকে গত বৃহস্পতিবার আবারও তাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে সারা দেশ থেকে আসা প্রতিযোগীদের সঙ্গে। রোববার পর্যন্ত ‘কিশোর’ ও ‘সাধারণ’ দুই বিভাগে চলবে শুদ্ধতম রবীন্দ্রসংগীতের প্রতিযোগিতা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা খাতুন বলেন, ‘আগে আমাদের বাঙালি হতে হবে, তারপর বিশ্বে নিজেদের ছড়িয়ে দিতে হবে। এই আদর্শে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের পথচলা শুরু। নিজেদের শিক্ষিত করে দেশবাসীর কাছে সেই শিক্ষা তুলে ধরতে হবে।’ রফিকুন নবী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে ধরে আমাদের এতটা পথ আসা। তাঁকে ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। সংগীত, চিত্রকলাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

প্রথম দিনের আয়োজনে গানের পাশাপাশি ছিল রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে নাচ। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নাচ করেন নৃত্যনন্দনের শিল্পীরা। আরও ছিল ধৃতি নর্তনালয় ও নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্রের পরিবেশনা। গান করেন মাকসুরা আক্তার, সুশান্ত রায়, অভয়া দত্ত, সুদীপ সরকার, রিমা সাহা, মোহাম্মদ সিফায়েতউল্লাহ, মহাদেব ঘোষ, ফাহমিদা খাতুন, বিশ্বজিৎ সেন, কৃষ্টি হেফাজ, সুপ্রিয়া দাশ, তন্বী দত্ত, নাঈমা নাজ প্রমুখ। দুপুরে ছিল আলোচনা পর্ব—রবিরশ্মি। সম্মেলক গান করেন সিলেট থেকে আসা সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা।

গতকাল বিকেলের বিরতিতে মিলনায়তনের বাইরে দেখা হয় সিলেটের প্রতিযোগী সঞ্জীবনী সুধার সঙ্গে। ‘তুমি ডাক দিয়েছ কোন্‌ সকালে’ গানটি আরও একটু সুন্দর করে গাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। সুধার সঙ্গে এসেছেন চিকিৎসক মা নিবেদিতা দাশ। নিজের গান শেখা হয়নি বটে, কিন্তু ইংরেজি স্কুলে পড়া মেয়েকে রবীন্দ্রসংগীত শেখাচ্ছেন। তিনি জানালেন, মেয়ের আগ্রহ আছে, ভালো সে করবেই।

সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা জানালেন, কিশোর বিভাগ খুব ভালো করেছে। আশার কথা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের গানের শুদ্ধতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলন নিয়ে তিনি বললেন, ‘আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি, কবে সম্মেলন হবে। এটা আমাদের প্রাণের মেলা।’ সিরাজগঞ্জ থেকে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা রতন লাল সূত্রধর বলেছেন, ওয়াহিদুল হক বেশ কয়েকবার গেছেন তাঁদের শহরে। নাম উঠতেই শ্রদ্ধার সঙ্গে এই সংগীতগুরুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন তিনি।

আজ শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। সকাল থেকে চলবে সাধারণ বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় প্রতিনিধি সম্মেলন। বিকেল ৫টায় ‘সভ্যতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ বিষয়ে প্রবন্ধ পড়বেন ভূঁইয়া ইকবাল। কাল রোববার সমাপনী আসরে দেওয়া হবে প্রতিযোগিতার পুরস্কার। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর হবে প্রতিনিধি সম্মেলন। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এই দিন তবলাশিল্পী মদন গোপাল দাস ও পট্‌শিল্পী শম্ভু আচার্যকে দেওয়া হবে রবীন্দ্রপদক ও গুণীজন সম্মাননা।