রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার শুরু

পালিয়ে ভারতে গিয়ে ধরা পড়া সিলেটের শিল্পপতি রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আবদুল হাইয়ের উপস্থিতি সিলেটে দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান দখল এবং সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের দুটি মামলার বিচার শুরু হয়েছে।

আজ রোববার রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের উপস্থিতিতে সিলেটের মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলার অভিযোগ গঠন হয়। বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় রাগীব আলী, ছেলে আবদুল হাই ও দেবোত্তর সম্পত্তির ভুয়া সেবায়েত সাজা দেওয়া মোস্তাক মজিদ কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
চা-বাগান দখলে মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির অভিযোগে রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অপর আরেকটি মামলার পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। রাগীব আলীর ছেলে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হলে তাঁর পক্ষে আইনজীবীরা পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়।

আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান জানান, জালিয়াতির মামলায় ইতিমধ্যে আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। আজ এ মামলায় রাগীব আলীসহ অন্য আসামিদের উপস্থিতিতে ১১ জন সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে গত ১২ আগস্ট পালিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ চলে যান রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে। গত ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হন রাগীব আলী। ওই দিনই তাঁকে দেশে পাঠানো হয়। গত ১২ নভেম্বর ভারত থেকে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন হয়ে দেশে ফেরার সময় আবদুল হাই গ্রেপ্তার হন।

এর আগে দুই আসামির অনুপস্থিতিতেই তারাপুর চা-বাগান দখলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির অভিযোগে রাগীব আলী ও আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। গ্রেপ্তারের পর আবদুল হাই আইনজীবীদের মাধ্যমে পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। রাগীব আলী আটকের পর আদালতে হাজির করা হলে তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আজ রোববার মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন তাঁকে হাজির করার নির্দেশ দেন। এ মামলায় রাগীব আলী, ছেলে আবদুল হাই ছাড়াও রাগীব আলীর মেয়ে রোজিনা কাদির, মেয়েজামাই আবদুল কাদির, দেবোত্তর সম্পত্তির ভুয়া সেবায়েত রাগীব আলীর এক আত্মীয়সহ ছয়জন অভিযুক্ত। এর মধ্যে রাগীব আলীর মেয়ে ও জামাতা পলাতক। মামলার অপর আসামি তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত জামিনে রয়েছেন।

সিলেটের পাঠানটুলার উপকণ্ঠে ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। সেখানে তাঁর ও স্ত্রীর নামে মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ স্থাপন করেন। হাসপাতাল এলাকার আশপাশের চা-বাগানের জায়গা বিক্রি করেন রাগীব আলী। সেখানে ৭১৫টি প্লটে বাসাবাড়ি রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত ১৯ জানুয়ারি রায়ে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ায় গত ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। রায়ের পরবর্তী নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালসহ সব অবৈধ স্থাপনা সরাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। গণবিজ্ঞপ্তির ওপর আপত্তি জানিয়ে পাঠানটুলা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের একটি পক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করলে সেটি শুনানির পর্যায়ে রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।