রাজাকার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করত শান্তি কমিটি

একাত্তরের এপ্রিল মাসে বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে নির্মূলের অভিযানে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য ‘সহযোগী সংগঠন’ হিসেবে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। শান্তি কমিটি পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করত।
বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে জয়পুরহাটে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল শান্তি কমিটি। অধ্যাপক আবু সাইয়িদের যুদ্ধাপরাধ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক বইয়ের উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘রাজাকার বাহিনী সাধারণভাবে শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন ছিল। প্রতিটি রাজাকার ব্যাচ “ট্রেনিং” গ্রহণের পর শান্তি কমিটির স্থানীয় প্রধান তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করত। এই অনুষ্ঠানে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান রাজাকাররা কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করত। এরপর রাজাকারদের “কুচকাওয়াজে” শান্তি কমিটির প্রধান সালাম গ্রহণ করত।...তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় গ্রামে-গঞ্জে অত্যাচার, নির্যাতন এবং সামরিক বাহিনীর অগ্রবর্তী পথপ্রদর্শক।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল দৈনিক পাকিস্তান-এ প্রকাশিত ‘শান্তি কমিটির আহ্বায়কের বিবৃতি: সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার আহ্বান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই যাবে, সেখানে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসার এবং রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তি ও দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করার অভিযানে সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য শান্তি কমিটি..।’ একই দিনে ওই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির আবেদন: সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করুন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রবিরোধী লোকদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং সশস্ত্র বাহিনীর লোকদের সব রকম সহযোগিতা করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি পূর্ব পাকিস্তানের সব দেশপ্রেমিক নাগরিককে আহ্বান জানিয়েছেন।’
ট্রাইব্যুনাল বলেন, জয়পুরহাটে পাকিস্তানি সেনা প্রবেশের আগে কনভেনশন মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে একাত্তরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আবদুল আলীমের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি দৈনিক বাংলা এবং একই বছরের ২৩ জানুয়ারি দৈনিক বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, জয়পুরহাটের হিন্দু মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী শাওনলাল বাজলার গদিঘরে শান্তি কমিটির কার্যালয় স্থাপিত হয়। জয়পুরহাট শহরে ওই কার্যালয় ছিল আসামি আলীমের বাড়ির পাশে। সাক্ষ্যে এটিও প্রমাণিত হয়, আলীম ওই কার্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।