রেলের জমির ওপর ক্লাবঘর, বাজার

মালিবাগ রেলগেট থেকে খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশ অবৈধ কাঁচাবাজার আর দোকানের দখলে। রেললাইনের পাশের সার্ভিস রোড দখল করে গড়ে উঠেছে একটি সংস্থার কার্যালয়, দরজির দোকান। এলাকাবাসী বলছেন, সন্ধ্যার পর রেললাইন ঘিরে মাদকের কেনাবেচা চলে।
গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, মালিবাগ রেলগেট থেকে ডান দিকে চলাচলের পথ বা সার্ভিস রোডের জায়গায় গড়ে উঠেছে একটি আধাপাকা ক্লাবঘর। ঘরটির ব্যানারে লেখা, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শাহজাহানপুর থানা কমান্ড’। রেলের জায়গায় কার্যালয় নির্মাণ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের শাহজাহানপুর থানার কমান্ডার হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই অফিস কারা করেছে আমি জানি না। শাহজাহানপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস শান্তিবাগ ঝিলপাড়ে। এদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিবাগ রেলগেট থেকে গুলবাগ পর্যন্ত সার্ভিস রোডের ওপর সারা বছর কাঁচাবাজার বসে। সবজি, মাছ, মুরগি, চাল, পেঁয়াজ—সবই বিক্রি হয় বাজারে। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই রেললাইনে ঘেঁষে টুকরি নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এই সড়কেই সারি বেঁধে প্রায় ২০টি সেলাই মেশিন নিয়ে দরজিরা বসেছেন। তাঁদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এখানেই বসছেন। দোকান বসানোর জন্য রেলগেটের গেটম্যানদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় বলে দোকানদারেরা অভিযোগ করেন।
মালিবাগ রেলগেটের গেটম্যান আবদুল হাশিম বলেন, রেলের জায়গা দখল করে দোকান, বাজার বসছে। প্রায়ই উচ্ছেদ হয়, নোটিশও দেওয়া হয়। তবু আবার এসে বসে। গেটম্যানদের পক্ষ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না বলে তিনি দাবি করেন।
মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. রউফ বলেন, সার্ভিস রোডে দখলের জন্য হাঁটাচলার সুযোগ পাওয়া যায় না।
রেলগেটের গুলবাগ, খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার অংশে রেললাইনের দুই পাশে আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ে। রেললাইনের পাশে ওয়ার্কশপের মালামাল রাখা। মাচা বেঁধে সবজির চাষও চলছে। খিলগাঁও রেললাইনের পাশের বস্তি উচ্ছেদের পর সেখানে এখন ইট ভাঙার জায়গা। রেললাইনের দুপাশেই লাল ইট স্তূপ করে রাখা। ইট ভেঙে পাওয়া সুরকি রেললাইনের পাশে বস্তাবন্দী করে রাখছেন শ্রমিকেরা। সুরকি ব্যবসায়ীদের একজন কল্পনা বেগম বলেন, বস্তি উচ্ছেদের পর এখানে ইটভাঙার ব্যবসা শুরু হয়েছে। ফাঁকা জায়গা পেয়ে এখানে বসেছেন। উঠিয়ে দিলে চলে যাবেন।
খিলগাঁওয়ের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেললাইন ঘিরে এলাকায় একটি মাদক চক্র সক্রিয় আছে। সন্ধ্যার পর লাইনের ওপর মাদক কেনাবেচা চলে।
রেলের জমি দখল নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রেললাইনের পাশে দখল উচ্ছেদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫টি উচ্ছেদ অভিযান হয়। সব সময় দখলমুক্ত করার চেষ্টা করলেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায় না। এই রেললাইনের ওপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাবে। তখন সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।