রোজিনা ইসলামকে হয়তো ফাঁদ পেতে ধরেছে

জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি
ছবি: প্রথম আলো

সত্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম হয়রানি, নির্যাতন ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাঁর করা প্রতিবেদনের কারণে যাদের আঁতে ঘা লেগেছিল, তারাই হয়তো ফাঁদ পেতে তাঁকে আটক করেছে। সাংবাদিকেরা কখনো তথ্য চুরি করেন না। তথ্য উদ্ধার করেন, তথ্য সংগ্রহ করেন। আর সে তথ্য দেশের মানুষের কাজে আসে, সমাজের কাজে আসে, মানুষের কাজে আসে।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে সংহতি জানান বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। তাঁরা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।  

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা প্রশ্ন তুলে বলেন, সচিবালয়ের মতো জায়গায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় ফাইল কেন অরক্ষিত অবস্থায় থাকবে। তাহলে তো ওই সব আমলাকে আগে চাকরি যাওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, এত বড় একটা মন্ত্রণালয়ে একজন সচিবের গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন ফাইল কেন যেখানে–সেখানে পড়ে থাকবে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে রোজিনা ইসলামের অনেকগুলো নিউজ আলোচিত ছিল। এগুলো খুব প্রশংসিত হয়েছে। এ কারণে কারও আঁতে  ঘা লেগেছে। তারা হয়তো কোনো ফাঁদ পেতেছিল রোজিনার বিরুদ্ধে, এমনও হতে পারে বলে মনে করেন বক্তারা।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, যাঁরা সৎ কর্মকর্তা, তাঁরা রোজিনা ইসলামদের সহযোগিতা করেন। আর যাঁরা অসৎ পন্থা অবলম্বন করেন, তাঁরা রোজিনা ইসলামদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। হয়রানি করার চেষ্টা করেন। সংবাদপত্রকে প্রতিপক্ষ ভাবেন।

যখন সারা দেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে সাংবাদিকেরা রাজপথে নেমে এসেছেন, সেই সময়ে এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিকনেতা শহিদুল ইসলাম। তিনি এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব পুলক ঘটক বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি বলছেন রোজিনার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, এতে মুখ দেখানো যায় না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন রোজিনা সুবিচার পাবেন। আইনমন্ত্রী প্রথম দিনেই বলেছেন সাংবাদিক রোজিনা ন্যায়বিচার পাবেন। এটা কি ন্যায়বিচারের নমুনা?

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, আশা করি রোজিনা ইসলামকে আগামীকাল নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হবে। তা না হলে নো-রিটার্ন হোম আন্দোলন শুরু করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মামুন ফরাজী বলেন, সাংবাদিকদের এই পরিণতির মূলে রয়েছে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধারায় যে আন্দোলন চলছে, প্রতিটি শক্তিকে একটা মোহনায় নিয়ে আসতে হবে। আন্দোলন একটা জায়গা থেকে পরিচালনা করা হলে এই আন্দোলন সফল হবে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া হেনস্তার ঘটনায় স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান তিনি। তা না হলে আন্দোলন চলবে।

আয়োজক সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মনির আহমেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য শাহনাজ পলি, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়, সংগঠনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রমুখ।