রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ জরুরি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের দাবিতে গতকাল দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয় l ছবি: প্রথম আলো
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের দাবিতে গতকাল দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয় l ছবি: প্রথম আলো

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে কক্সবাজার শহরে মানববন্ধন করেছেন বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এ সময় বক্তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা। জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি রণজিত দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন কক্সবাজারের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সাংসদ এথিন রাখাইন, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ শর্মা, কক্সবাজার বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া, কক্সবাজার বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল বড়ুয়া, জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, বৌদ্ধনেতা জেমসেন বড়ুয়া, বঙ্কিম বড়ুয়া, কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি দীপক দাশ, বাবু রাখাইন প্রমুখ।

সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন কক্সবাজার-২ আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

অধ্যক্ষ ক্য থিং অং বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অযৌক্তিক অজুহাতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন কোনোভাবে কাম্য নয়। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অবর্ণনীয়। মিয়ানমারকে এই নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানান বাবু রাখাইন।

রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারে সংখ্যালঘু। তাদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার নিজেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বলে দাবি করে। বৌদ্ধ ধর্মে জীব হত্যা মহাপাপ। অহিংস বাণীর ওপরই বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী কারও পক্ষে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটনানো সম্ভব নয়।

মিয়ানমার সরকারের এই নির্যাতন পৃথিবীর সব বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বঙ্কিম বড়ুয়া। তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের লেবাস ধারণ করে তারা মানুষ হত্যা করছে। এতে সারা বিশ্বে অহিংসের বৌদ্ধ ধর্মকে বিতর্কিত করে তুলছে।

প্রিয়তোষ শর্মা বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার অজুহাতে মিয়ানমার সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন করছে, তা অমানবিক। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সরকার এভাবে দমন-পীড়ন চালাতে পারে না। কর্তৃপক্ষের উচিত সু চির নোবেল ফিরিয়ে নেওয়া।

মিয়ানমারে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন রণজিত দাশ। এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।