লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষ গুলিতে ৪ জনসহ নিহত ৫

লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে গতকাল বৃহস্পতিবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হন অর্ধশত। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ কমপক্ষে ৩০ জন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মাহবুবুর রহমান, যুবদলের ইকবাল মাহমুদ জুয়েল ও মো. সুমন, ছাত্রশিবিরের শিহাব হোসেন। জুয়েল জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি।

বিএনপির জেলা যুগ্ম সম্পাদক হারুনুর রশিদ ব্যাপারীর দাবি, চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। র‌্যাবের সদস্যরা জুয়েলের লাশ নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া ইসলাম মার্কেট এলাকায় র‌্যাবের সহযোগী সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাতপরিচয়ের একজন নিহত হন। হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোট কাল শনিবার লক্ষ্মীপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। 

শহরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন সাবুর উত্তর তেমুহনীর বাসভবনে র‌্যাব-১১ ভোর ছয়টার দিকে অভিযান চালালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। শহরের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্তভাবে এ সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে র‌্যাবের একটি হেলিকপ্টার পুলিশ লাইনে অবতরণ করে এবং তিনটা ৮ মিনিটে ওই এলাকা ত্যাগ করে। এর আগে ওই এলাকার লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী মহাসড়ক অংশে জনতা র‌্যাবের চারটি গাড়ি ঘিরে ফেলেন। সন্ধ্যার দিকে র‌্যাবের গাড়িগুলো পুলিশ লাইন এলাকা ছেড়ে মান্দারী বাজারের দিকে এলে তারা আবারও জনতার অবরোধের মুখে পড়ে। এ সময় র‌্যাব ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকা ত্যাগ করে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।

সাহাবউদ্দিনের ভাই আবুল কালাম আজাদের অভিযোগ, তাঁদের বাসভবনে র‌্যাবের অভিযানে স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসীও ছিল। মাইক্রোবাসে করে আসা এসব সন্ত্রাসী বাসভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং তিনটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় সাহাবউদ্দিন, আজিজুল করিম ও বাড়ির দুজন তত্ত্বাবধায়ককে গুলি ও মারধর করে সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সাহাবউদ্দিন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকিরা থানা হেফাজতে আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

র‌্যাবের অভিযানে অংশ নেন ১৫-২০ জন সদস্য। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, র‌্যাব-১১-এর একজন কর্মকর্তা অভিযানের নেতৃত্ব দেন। বাসভবনে বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথ অভিযান চালায়। এতে পুলিশ, আনসার ও বিজিবির সদস্যরাও ছিলেন। এর বাইরে অন্য কেউ ছিল না। লাশ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে হাবিবুর রহমান জানান। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল।

গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লক্ষ্মীপুরে অবরোধ-সমর্থনকারী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দেশি অস্ত্রসহ আক্রমণ চালান। র‌্যাব সরকারি সম্পদ ও জনগণের জানমাল রক্ষার্থে পাল্টা ব্যবস্থা নিলে সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। 

 স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, র‌্যাবের অভিযানের খবর পেয়ে জেলা যুবদলের নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বে যুবদলের ১৫-১৬ জন কর্মী সাহাবউদ্দিনের বাসার দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এ সময় শহরের চকবাজার এলাকায় জুয়েল এবং যুবদলের কর্মী নেছার র‌্যাবের হাতে গুলিবিদ্ধ হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুয়েলের গুলিবিদ্ধ দেহ র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এরপর র‌্যাবের সদস্যরা লক্ষ্মীপুর থেকে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে পুলিশ লাইন পর্যন্ত দিনভর থেমে থেমে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শহরের আলিয়া মাদ্রাসা, ঝুমুর সিনেমা, ইসলাম মার্কেট, পুলিশ লাইন, এলজিইডির কার্যালয়সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীরা লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কে গাছ ফেলে রাস্তায় অবরোধ করেন। সংঘর্ষে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীও যুক্ত হন।

ইসলাম মার্কেট এলাকায় বন বিভাগের কার্যালয়ের সামনে র‌্যাবের সহযোগী সন্দেহে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক যুবক গণপিটুনিতে নিহত হন। বিক্ষুব্ধ জনতা বন বিভাগের কার্যালয়ও ভাঙচুর করেন।

সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে এনএসআইয়ের সদস্য আনোয়ার হোসেন; মানিক হোসেন, শিমুল, রাকিব হোসেন, কামাল হোসেন, ওসমান গনি, টিপু, তারেক, বেলাল হোসেন, মাহবুব হোসেন, শিহাব হোসেনসহ ১৮ জনকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ও বাকিদের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।