লঞ্চও চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে, ভাড়া বাড়ানোর চিন্তা নেই সরকারের

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কাল বুধবার এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চললেও আপাতত লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর চিন্তা নেই সরকারের। আর লঞ্চমালিকেরা বলছেন, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চললে ভাড়া বাড়াতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা (নৌ-নিট্রা) বিভাগ জানিয়েছে, ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে লঞ্চমালিকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আগামীকাল নির্দেশনা জারি করা হবে। তবে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে ভাড়া বাড়বে কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এতে নেই।

নৌ-নিট্রা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্ধেক যাত্রী পরিবহন বিষয়ে নির্দেশনা তাঁরা জারি করলেও ভাড়া বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর কোনো চিন্তাভাবনা আমাদের নেই।’
লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী পরিবহন বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।’

বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা পাওয়ার পর সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হলে ভাড়া বাড়াতে হবে।

ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের জন্য গত বছরের ১ এপ্রিল যাত্রীবাহী নৌযানের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। তবে এই বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছিল শুধুমাত্র ডেকের যাত্রীদের। কেবিনের যাত্রীরা ভ্রমণ করেছেন পূর্বের ভাড়ায়। চার মাসের বেশি সময় বর্ধিত ভাড়ায় চলাচলের পর গত বছরের ১১ আগস্ট থেকে এই আদেশ বাতিল করে বিআইডব্লিউটিএ।

গত ৭ নভেম্বর লঞ্চভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা করে বাড়ায় সরকার। ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ৩৫ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ৪৩ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে লঞ্চভাড়া ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা। এই ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪০ পয়সা, যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা। এ ছাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ টাকা।

সরকারি হিসাবমতে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত যাত্রীবাহী (লঞ্চ) নৌযানের সংখ্যা ৮৩৮টি। রাজধানীর সদরঘাট থেকে ৪৪টি নৌরুটে মোট ১২১টির মতো যাত্রীবাহী নৌযান দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ৮৫টির মতো যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া আরিচা-দৌলতদিয়া/কাজিরহাট থেকে ৩৩টি, ভৈরব নদীবন্দর থেকে ২২টি, নরসিংদী নদীবন্দর থেকে ৬টি, বরিশাল নদীবন্দর থেকে ৩৫টি এবং নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে বিভিন্ন নৌরুটে ৫২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে।