লতিফুর রহমান একজন বিরল ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। ফাইল ছবি
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। ফাইল ছবি

বেশির ভাগ যখন অসৎ পথে দ্রুত ধনী হওয়ার পথে হেঁটেছে, তখন লতিফুর রহমান প্রাধান্য দিয়েছেন নীতিকে। সবাই যখন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসা করেছে, লতিফুর রহমান তখন আপস করেননি। অন্য গণমাধ্যমের মালিকেরা যখন চাপে নুয়ে পড়েছেন, লতিফুর রহমান তখন ছিলেন দৃঢ়চেতা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে লতিফুর রহমান একজন বিরল ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের স্মরণসভায় তাঁকে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা। লতিফুর রহমান প্রতিষ্ঠিত দুই দৈনিক পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার গতকাল মঙ্গলবার ভার্চ্যুয়াল এই স্মরণসভার আয়োজন করে।

লতিফুর রহমান ১ জুলাই ৭৫ বছর বয়সে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে মারা যান। 'স্মৃতি ও কৃতি' শিরোনামে তাঁকে নিয়ে অনুষ্ঠিত স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, 'আমরা এখন সম্পদশালীদের ঔদ্ধত্যের যুগে বাস করছি। সম্পদ লতিফুর রহমানেরও ছিল। কিন্তু তিনি কখনো প্রদর্শনবাদিতায় বিশ্বাসী ছিলেন না।'

অধ্যাপক রেহমান সোবহানের বক্তব্যের বেশির ভাগ জুড়ে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় লতিফুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আসলে আসে মালিকের কাছ থেকে। বাংলাদেশ ও ভারতে বড় পত্রিকাগুলোর মালিক মূলত বড় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অনেকেই সরকারের চাপের কাছে ভেঙে পড়েন। কিন্তু লতিফুর রহমান সব চাপ নিজে সহ্য করেছেন। এ কারণে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছে। লতিফুর রহমান স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করেছেন এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো ব্যবসা করেননি উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, 'এটি একটি অবিস্মরণীয় অর্জন।' তিনি মন্তব্য করেন, লতিফুর রহমান তাঁর পরিবার ও দুই পত্রিকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ রেখে গেছেন। তা হলো তাঁর 'লিগ্যাসি' (উত্তরাধিকার) ধরে রাখা।

রেহমান সোবহান বলেন, 'তাঁর (লতিফুর রহমান) মূল্যবোধ ধরে রাখাই হবে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এক বছর পরও যদি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার খুলি, তাহলে যেন মনে হয়, তিনি যেটা রেখে গিয়েছিলেন, সে রকমই রয়েছে।'

এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা নিজে সভাপতি থাকার সময় এমসিসিআইয়ের (মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) সঙ্গে লতিফুর রহমানের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, 'প্রথম দিনই আমি আর সি কে হায়দার (এমসিসিআইয়ের সাবেক মহাসচিব) আলোচনা করেছিলাম যে লতিফুর রহমান একসময় এমসিসিআইয়ের একজন ভালো সভাপতি হবেন।' তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে লতিফুর রহমান প্রথম সভাপতি হন। তিনি মোট সাতবার সভাপতি ছিলেন। নিজ নেতৃত্বগুণে এমএসসিসিআইয়ের কার্যক্রমকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। লতিফুর রহমান ছিলেন বন্ধুবৎসল। তরুণদের জন্য রোল মডেল। নতুন উদ্যোক্তাদের আশা। আর প্রতিষ্ঠিতদের জন্য অনুসরণযোগ্য।

অনুষ্ঠানে বাবাকে স্মরণ করেন লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে ও এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন হোসেন। তিনি বলেন, 'আমি একবার আব্বুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি কেন গণমাধ্যমে বিনিয়োগ করলেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, এই দুটি পত্রিকা বাংলাদেশের মানুষের জন্য দরকার ছিল।'

সিমিন হোসেন বলেন, 'আব্বু পত্রিকার সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করতেন না। মাঝেমধ্যে দুই পত্রিকায় লেখালেখির কারণে ট্রান্সকমের ব্যবসা বাধার মুখে পড়ত। তারপরও আব্বু বলতেন, পত্রিকা তাদের কাজ করছে। তিনি (লতিফুর রহমান) সব সময় বিশ্বাস করতেন যে পত্রিকা স্বাধীন থাকবে, বস্তুনিষ্ঠ থাকবে এবং পক্ষপাতমুক্ত থাকবে, তার ফলাফল যা-ই হোক না কেন।'
বাবার কাছ থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সিমিন হোসেন বলেন, 'আমাদের আশা, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার তাঁর (লতিফুর রহমান) কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাবে।'

সিমিন হোসেনের বক্তব্য সমর্থন করে মতিউর রহমান বলেন, 'এটা সত্য। বোর্ডে কখনো সংবাদ নিয়ে আলোচনা হতো না। হতো ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে। আর আমি ও মাহ্‌ফুজ আনাম স্বাধীন সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি। বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে আমরা সুনাম অর্জন করেছি।'

ডেইলি স্টার–এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়া ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান ও প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টারের বোর্ড সদস্য রোকিয়া আফজাল রহমান বলেন, 'শামীমের (লতিফুর রহমান) সঙ্গে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে আমি ছিলাম। যেকোনো বোর্ড সভায় শামীম অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বের ভূমিকায় চলে আসত। তাঁর জাদুকরি একটা ক্ষমতা ছিল, সে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতো। এমনই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব।' তিনি বলেন, 'আমরা যখন সমস্যা নিয়ে হাবুডুবু খেতাম, শামীম খুব সহজেই সমাধান করত।'
বেসরকারি উন্নয়ন–সহযোগী সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সাফল্য ও নীতি সাংঘর্ষিক নয়, এটি প্রমাণ করে গেছেন লতিফুর রহমান। তিনি দেখিয়েছেন, নীতির পথে থেকেই ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া যায়। তরুণ প্রজন্ম তাঁর দৃষ্টান্ত অনুকরণ করতে পারে। তিনি বলেন, ‌'আবেদ ভাই (ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদ) লতিফুর রহমানকে অত্যন্ত উঁচুভাবে মূল্যায়ন করতেন। ব্র্যাকের বিবর্তনে তাঁর অবদানের কথা বলতেন।'

সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর বলেন, লতিফুর রহমানকে রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে দেখিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে গেলে তিনি স্পষ্ট দুটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। ১. মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এটা জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। দুই. যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের শাস্তি না হলে তার জন্য জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে লতিফুর রহমান একাধিকবার অর্থ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আসাদুজ্জামান নূর।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম লতিফুর রহমানের সততা ও নৈতিকতার কথা বলতে গিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। বলেন, ‌'একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কেনার আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। পরে জানা গেল, চ্যানেলটি স্যাটেলাইটের বিল পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া অর্থ প্রেরণ করে। লতিফুর রহমান চ্যানেলটি কেনার প্রক্রিয়া সেখানেই বাদ দিলেন।' তিনি বলেন, লতিফুর রহমানের মূলমন্ত্র ছিল তিনটি। সততা, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও দেশপ্রেম।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, মানুষ চলে যাওয়ার পর তাঁর আচরণটাই স্মরণে থাকে। সব বিষয়ে একমত না হলেও মানুষকে স্নেহ–মমতা দিয়ে যে আপন নেওয়া যায়, তা লতিফুর রহমান দেখিয়েছেন।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, শিল্পপতিদের জন্য সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের মালিক হওয়া এ দেশে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সব সময় সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলা যায় না। কিন্তু লতিফুর রহমান তা করে দেখিয়েছেন। এর জন্য তাঁকে অনেক ভুগতে হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতায় কখনো হস্তক্ষেপ করেননি।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর লতিফুর রহমানকে একজন ব্যতিক্রমী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর চোখে পাঁচটি দিক দিয়ে ব্যতিক্রমী ছিলেন লতিফুর রহমান। ১. তিনি প্রথমে নীতি ঠিক রাখা ও পরে অর্থের চিন্তা করতেন। ২. স্বল্প মেয়াদে নয়, সব সময় দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতেন। ৩. সুবিধা নিতে আপস করতেন না। ৪. অনেক আগেই স্থানীয় বাজারের সম্ভাবনা ধরতে পেরেছিলেন। ৫. জীবনে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বিনয়ী হয়েছেন।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) সভাপতি রূপালী চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন যে লতিফুর রহমানের উত্তরসূরিরা তাঁর আদর্শ মেনে তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে নেবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য এমন অনেক লতিফুর রহমান দরকার।
সাবেক হাইকমিশনার ও লতিফুর রহমানের স্বজন তারেক করিম তাঁদের জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন। বলেন, 'শামীম তাঁর পরিবারের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁর জীবনের দুটি বিয়োগান্ত ঘটনা তাঁকে কখনো হতাশ করতে পারেনি।'

সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, 'নিজে সংবাদপত্র প্রকাশ করার পর মালিক হিসেবে চাপ বুঝতে পেরেছি। কখনো কখনো চাপের কাছে নতিস্বীকারও করেছি। কিন্তু লতিফুর রহমান কখনো করেননি।' তিনি বলেন, 'মতিউর রহমান বামপন্থী রাজনীতি করা লোক। আর লতিফুর রহমান একজন শিল্পপতি। আমার ধারণা ছিল, তাঁদের মতের মিল হবে না। আমি মতিউর রহমানের মাধ্যমে পত্রিকা বের করব। কিন্তু পরে দেখলাম, তাঁদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।'

হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুব উর রহমান বলেন, লতিফুর রহমান মৃত্যুহীন প্রাণ। শারীরিকভাবে তিনি চলে গেছেন, রয়ে গেছে তাঁর মূল্যবোধ।

এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের এমনিতেই অনেক দুর্নাম। তাঁরা অনৈতিকতার আশ্রয় নেন। এর মধ্যেই ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন লতিফুর রহমান। তিনি নিজেই একটা ইতিহাস, নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। সবার উচিত তাঁকে অনুসরণ করা।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা বলেন, লতিফুর রহমান বয়স বা অবস্থান দিয়ে কাউকে বিবেচনা করতেন না। সবার কথা আন্তরিকতার সঙ্গে শুনতেন। সবাইকে সুযোগ দিতেন।

সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রথম হত্যা হয় মালিকের হাতে। কিন্তু লতিফুর রহমান একমাত্র বিরল ব্যতিক্রম। গণমাধ্যমে যাঁরা বিনিয়োগ করতে চান, তিনি তাঁদের জন্য দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, গণমাধ্যম ও দেশকে এগিয়ে নিতে আরও লতিফুর রহমান দরকার। তাই শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, ব্যবসায়ীরা তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার শপথ নিতে পারেন।

বিভিন্ন সময় লতিফুর রহমানের সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তিনি লতিফুর রহমানের স্মরণে গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসংগীত 'সম্মুখে শান্তি পারাবার, ভাসাও তরণী হে কর্ণধার, তুমি হবে চিরসাথী, লও লও হে ক্রোড় পাতি/ অসীমের পথে জ্বলিবে জ্যোতি ধ্রুবতারকার।'

লতিফুর রহমানের নাতি ও তরুণ উদ্যোক্তা যারেফ আয়াত হোসেন তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, 'নানাভাই ছিলেন অসম্ভব দেশপ্রেমিক একজন বাংলাদেশি। তিনি বাংলাদেশের জন্মের পরপরই ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অসম্ভব সম্ভাবনা দেখেছিলেন।'

যারেফ আয়াত হোসেন বলেন, 'আমার নানাভাই আমাকে বলেছিলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর জন্ম হয়েছে, কারণ, দেশের তাদের দরকার ছিল। দুটি পত্রিকা নানাভাইয়ের মূল্যবোধের প্রতীক।' তিনি বলেন, 'সেই মূল্যবোধ হলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করা, ব্যবসার মাধ্যমে দেশের মানুষকে এগিয়ে নেওয়া এবং বাংলাদেশ উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করতে কাজ করা।' লতিফুর রহমানের 'লিগ্যাসি' প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে টিকে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন যারেফ।

সবশেষে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর ও মাহ্‌ফুজ আনামের পক্ষ থেকে আলোচকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের আলোচনা লতিফুর রহমানের পরিবারের সদস্য শাহনাজ রহমান, সিমিন হোসেন, আরশাদ ওয়ালিউর রহমান, শাজরেহ হক, যারেফ আয়াত হোসেন এবং বৃহত্তর ট্রান্সকম পরিবারের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে।'

মতিউর রহমান আরও বলেন, 'প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই, লতিফুর রহমানের স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। এর প্রতি আমাদের অবিচল সমর্থন থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আমরা দৃঢ় থাকব। গণতন্ত্রের জন্য আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকব। পাশাপাশি দেশের অগ্রগতি ও সম্মান বৃদ্ধিতে দুই সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।'

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো সব সময় লতিফুর রহমানের আদর্শের প্রতি লক্ষ রেখে বাংলাদেশের মানুষের সফলতা চাইবে এবং বাংলাদেশের প্রতিটি বিজয়ের সঙ্গে থাকবে বলে মন্তব্য করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, 'আমরা আশ্বাস দিচ্ছি, আপনাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দুই সংবাদপত্রের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।'

অনুষ্ঠানে তিনজন আলোচক লতিফুর রহমান সম্পর্কে তরুণদের জানার সুযোগ দিতে জীবনীগ্রন্থ বা অনলাইনে তাঁর একটি আর্কাইভ তৈরির পরামর্শ দেন। মতিউর রহমান এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।