লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলে ইসিতে আ.লীগের চিঠি

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের অনুরোধ করে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সই করা এই চিঠি ইসিতে পৌঁছে দেন দলের উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ও দলীয় নেতা এ বি এম রিয়াজুল কবির।
একই দিন লতিফ সিদ্দিকী ইসিতে পাঠানো এক চিঠিতে তাঁর বিষয়ে শুনানি বিতর্কে না গিয়ে বিষয়টি স্পিকারের কাছে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন। তাঁর একজন ব্যক্তিগত সহকারী চিঠিটি কমিশনে পৌঁছে দেন।
আওয়ামী লীগের চিঠিতে বলা হয়েছে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানেন। যে কারণে ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় লতিফ সিদ্দিকীকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, প্রার্থী মানে দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তি। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নির্বাচনের আগে ও পরে নেই। দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কার হওয়ায় বর্তমানে লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের কেউ নন। যে কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন। তাই তাঁর সদস্য পদ বাতিলের অনুরোধ করছি।
অপর দিকে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর চিঠিতে বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি কোনো আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ও দেউলিয়া ঘোষিত হলে, বিদেশি রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করলে, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত হলে, প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে থাকলে এবং দল থেকে পদত্যাগ করলে বা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তাঁর সদস্যপদ শূন্য হতে পারে। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে আনীত অভিযোগ এসবের কোনোটিতেই পড়ে না। যে কারণে নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে শুনানির এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা একমাত্র ফৌজদারি আইনে আদালত বিচার করতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সংসদের ফৌজদারি অপরাধ আমলে নেওয়ার অধিকার নেই। আমার বিরুদ্ধে মামলা চলা অবস্থায় আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কার করে আইন লঙ্ঘন করেছে। এর আগে সাংসদ আবু হেনা দল থেকে বহিষ্কারের পরও তার সদস্যপদ বাতিল হয়নি। এ বিষয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে বলা আছে, কোনো সদস্য দল থেকে বহিষ্কার হলে তঁার সদস্য পদ বহাল থাকবে এবং সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই দলের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন। এ অবস্থায় কমিশনকে এ বিষয়ে শুনানি আয়োজন না করে বিষয়টি সংসদের স্পিকারের কাছে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করছি।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, আইন পর্যালোচনা, অতীতের রেওয়াজ দেখে এবং প্রয়োজনে শুনানি গ্রহণ করে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ১৩ জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি নিষ্পত্তির অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেন। কমিশন ২ আগস্টের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীকে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। সংসদ সদস্য বিরোধ নিষ্পত্তি আইনে বলা আছে, উভয় পক্ষের বক্তব্য পাওয়ার পর কমিশন শুনানি গ্রহণ করে ১২০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে।