লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হলো 'সোনার বাংলা'

বিশ্ব রেকর্ডের লক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তিন লাখেরও বেশি কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে গাওয়া হয় গানটির প্রথম ১০ লাইন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সাংসদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সেনাসদস্য, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পোশাকশ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষ প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন।

সংগীত পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সুরকার স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যাম।

‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করতে আজ ভোর থেকেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড অভিমুখে লাখো মানুষের ঢল নামে। দীর্ঘ লাইন ধরে প্যারেড গ্রাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করেন নানা শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষ। এ সময় প্রত্যেককে একটি ব্যাগ দেওয়া হয়। এতে জাতীয় পতাকা, গানের বাণী ও প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা লেখা কার্ড, পানির বোতল, স্যালাইন ইত্যাদি ছিল।

ময়দানে প্রতি ৫০ জন লোককে নিয়ে একটি ব্লক করা হয়। মোট ব্লক ছয় হাজার।

সাড়ে ১০টার পর উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর অনুষ্ঠিত হয় মহড়া। বেলা ১১টা আট মিনিটে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান তিনি। একই সঙ্গে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার এই আয়োজনে অংশ নেওয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। ছবিটি আজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে তোলা। ছবি: মনিরুল আলম
বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। ছবিটি আজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে তোলা। ছবি: মনিরুল আলম

এরপর মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়, মোট দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনকে গণনা করা হয়েছে। তবে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে প্যারেড গ্রাউন্ডে তিন লাখের বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছেন।

বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তিন লাখেরও বেশি কণ্ঠে গাওয়া হয় গানটি। গানের সঙ্গে সবাই ঠোঁট মেলাচ্ছেন কি না—এটিসহ রেকর্ড হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পর্যবেক্ষণ করে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ। যদি শতকরা পাঁচজন লোকও কণ্ঠ না মেলান, তবে রেকর্ডের জন্য এই আয়োজনটি বিবেচিত হবে না। সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে রেকর্ড হওয়া না-হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

ঢাকার মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে মিল রেখে একই সময়ে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ জাতীয় সংগীত গান।

প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় সংগীতের পর দেশের খ্যাতিমান এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের অংশগ্রহণে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সবচেয়ে বেশি মানুষের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আনুষ্ঠানিক রেকর্ডটি ভারতের দখলে। সাহারা গ্রুপের আয়োজনে এক লাখ ২২ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে গত বছরের ৬ মে এই বিশ্ব রেকর্ডটি হয়েছিল। আজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তিন লাখের বেশি মানুষ একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়ে স্থাপন করতে যাচ্ছে নতুন বিশ্ব রেকর্ড।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষার্ধে সারা দেশে ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ কর্মসূচি নিয়ে কর্মতত্পরতা শুরু হয়। শুদ্ধ করে জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য, সঠিক সুরে গাওয়া জাতীয় সংগীতের অডিও রেকর্ড শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। সেই অডিও থেকে সঠিক সুরে জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রশিক্ষণ ও মহড়া হয়েছে সারা দেশে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহায়তায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই আয়োজনটি বাস্তবায়ন করেছে।