শওকত ওসমানের ‘শক্তি ছিল সততা, যাঁর এখন বড় অভাব’

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনা সভায় অতিথিরা
ছবি: দীপু মালাকার

বাঙালি জাতির কথাশিল্পী ছিলেন শওকত ওসমান। তাঁর মূল শক্তি ছিল সততা। অথচ বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা সততা অনুপস্থিত। অসাম্প্রদায়িক ও যুক্তিবাদী মানুষটির লেখায় থাকত আধুনিকতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির কথা। তাঁর মতো গুণী ব্যক্তি এ সমাজে বড়ই প্রয়োজন। এসব কারণেই শওকত ওসমানকে স্মরণ করা দরকার।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে রোববার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা। কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে দেশে গুণীর কদর হয় না, সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না। দেশে বর্তমানে শওকত ওসমানের মতো গুণীর বারবার দরকার। গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস সব ক্ষেত্রেই তাঁর দখল ছিল। এমন সৎ মানুষ সত্যিই বিরল।

শওকত ওসমানের ছেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, শওকত ওসমান ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে জিহাদ করতেন। অথচ তিনি ছোটবেলায় প্রথমে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছিলেন। তাঁর শক্তি ছিল সততা। অথচ বর্তমান সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সততা নেই। তাঁর কাছে সততা মানে এর জন্য জীবন দেওয়া যায় এমন।

তিনি বলেন, যে মানুষগুলো ধর্ম নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অপব্যবহার করত, শওকত ওসমান তাঁদের দেখতে পারতেন না। তিনি সাহিত্যে মানুষের বোধ নিয়ে আসতেন। এসব কারণেই শওকত ওসমানকে স্মরণ করা দরকার। নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে তাঁকে স্মরণ করতে হবে। প্রতিবছর কেবল জন্মদিন আর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ করলে হবে না।

কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের ১০৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন তাঁর ছেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। রোববার সন্ধ্যায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে।
ছবি: দীপু মালাকার

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, জাতির কথাশিল্পী ছিলেন শওকত ওসমান। তিনি সব সময় প্রমিত উচ্চারণে জোর দিতেন। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল ব্যতিক্রম। তিনি ছাত্র–শিক্ষক সবাইকেই ‘স্যার’ বলে সম্মান দিতেন।

মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, শওকত ওসমান সাহিত্যের নানা কলাকৌশল জানতেন। পাকিস্তান আমলে বাঙালি নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য প্রতীকীভাবে তিনি কাজ করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি বাঙালির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতেন। তিনি শুধু সাহিত্যসাধনা নয়, জীবনসাধনা করতেন, সুষম সমাজ গড়তেও কাজ করতেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শওকত ওসমানের ‘পঞ্চসঙ্গী’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দিপু সিদ্দিকী, শওকত ওসমানের পৌত্র ইশরার ওসমান প্রমুখ।

শওকত ওসমান একাধারে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ ও স্মৃতিকথা লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হচ্ছে ‘ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘মনিব ও তার কুকুর’, ‘জন্ম যদি তব বঙ্গে’, ‘সাবেক কাহিনী’, ‘জুনু আপা’। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘জননী’, ‘ক্রীতদাসের হাসি’, ‘বনী আদম’, ‘পুরাতন খঞ্জর’, ‘জলাঙ্গি’, ‘দুই সৈনিক’, ‘নেকড়ে অরণ্যে’। সাহিত্যে অবদানের জন্য শওকত ওসমান বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালের ১৪ মে তিনি মারা যান।