ওয়াসার উৎপাদিত পানি উৎসে বিশুদ্ধ হলেও ব্যবহারকারী পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে তা দূষিত হয়ে যায়। এর ফলে শহরের দরিদ্র মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। অব্যবস্থাপনা এবং অসচেতনতার কারণে ঘটা এ দূষণের কারণে শহরের বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে।
রাজধানীতে গতকাল এক গোলটেবিল আলোচনায় এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াটারএইড এবং ডেইলি স্টার-এর সহযোগিতায় এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মনোজ রায়ের নেতৃত্বে ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ, ভারত, তানজানিয়া ও যুক্তরাজ্যের ১২টি সংগঠন অনানুষ্ঠানিক বসতির মানুষের ওপর দুটি গবেষণা করে। গবেষণার বিষয়বস্তু শহরের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের বাস্তুতান্ত্রিক সেবার অভিগম্যতা এবং শহুরে অনানুষ্ঠানিক বসতির মানুষের জন্য পানযোগ্য পানি সরবরাহ।
নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য এর সঙ্গে জড়িত সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ গবেষণায় ঢাকা শহর এবং তানজানিয়ার দারুসসালাম শহরের পানির দূষণের মাত্রার তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে। দারুসসালাম শহরের চেয়ে ঢাকা ২০ গুণ বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। জনসংখার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এখানে পানিদূষণের হার বেশি।
গোলটেবিল বৈঠকে ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছে দিতে হলে যেসব উৎস থেকে পানিদূষণ হয়, সেগুলো দূর করতে হবে। কেবল ১০০ মিটারের মধ্যে নয়, সব ভোক্তা যাতে পানি পায় সে জন্য ওয়াসা কাজ করছে।
বেসরকারি সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক দিবালোক সিংহ বলেন, ঢাকা শহরে নগরায়ণ পরিকল্পনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকার বস্তিবাসীর জন্য সরকারের বরাদ্দও কম থাকে। তাদের থাকার জন্য স্থায়ী জায়গা লাগবে। তার পরপরই সেখানে পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর খাইরুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৬ নম্বর ধারায় সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সবার জন্য পানি ও পয়োনিষ্কাশনের সহজপ্রাপ্যতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্যও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।
তবে অনানুষ্ঠানিক বসতি বা বস্তি কোনো স্থায়ী বাসস্থান নয়। এ জন্য ঢাকায় বসবাসরত এসব মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থার ওপর জোর দেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, বস্তির ভেতরের অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ মেটানোর ক্ষমতা নেই। কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতা না বাড়লে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে। নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকটির সঞ্চালনায় ছিলেন ওয়াটারএইডের প্রোগ্রাম ও পলিসি অ্যাডভোকেসির পরিচালক মো. লিয়াকত আলী। আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফিরোজ আহমেদ, ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) কর্মসূচি পরিচালক সুরেশ কুমার রোহিল্লা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস জাহান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ফারুক, আইসিডিডিআরবির গবেষক ঈশিতা মুস্তাফা, ডেইলি স্টার-এর সহযোগী সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহেদ আনাম প্রমুখ।