শহরে থেকেই আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে মেয়েটি

বগুড়ার সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের কথা উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, অযথা আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে লেখা বন্ধ করুন।

ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার এক সপ্তাহ পর গতকাল শহরের সাতমাথায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় বগুড়া আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লেও সমাবেশে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই উপস্থিত ছিলেন। তবে বক্তব্য দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান। ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত সদ্য বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের নাম ধরে তাঁরা অবশ্য কিছু বলেননি।

বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী এবং বগুড়ায় সংঘটিত ন্যক্কারজনক ঘটনা, মাদক, জুয়া, সন্ত্রাস, ভূমি দখল, যানজট এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এই সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। সমাবেশে অনেক নেতা উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেন ওই দুজন।

মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আমার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। আমার সেই দুঃখ-কষ্টকে নিয়ে কিছু পত্রিকা লেখালেখি করছে। যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, যারা প্রধান বিচারপতিকে উসকানি দিয়ে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চায়, তাদের সুদূরপ্রসারী অ্যাজেন্ডা নিয়ে বগুড়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব অপপ্রচার বন্ধ করুন।’

বগুড়ার ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে উল্লেখ করে মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। দলের কেউ অপকর্ম করলে তার দায় দল নেবে না।’ তিনি বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, এখনো সময় আছে সাবধান হয়ে যান। না হলে যে ঝাড়ু মিছিল বের করেছেন, তা নিজেদের পিঠে পড়বে। রাস্তায় নামার চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান বলেন, বগুড়ায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এতে জড়িতদের আওয়ামী লীগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। কোটি কোটি সমর্থকের মধ্যে কেউ এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে দল তার দায় নেবে না। এ ঘটনা নিয়ে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। বগুড়ার ঘটনা যে মহল্লায় ঘটেছে সেখানে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। মহল্লাবাসী যদি সম্মিলিতভাবে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতেন, তবে সেখানে এতবড় জঘন্য অন্যায় কেউ করতে পারত না।

সমাবেশে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন শেখ হেলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আছাদুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শেখসহ বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পরিবহন থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল শহরের সাতমাথায় যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্কসহ নানা সংগঠন মানববন্ধন করেছে।

শহরে থেকেই আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে মেয়েটি

হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার পর বগুড়া শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চাইছে না ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার মেয়েটি। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন মেয়েটি গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেছে, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মাকে নিয়ে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাব। কিন্তু অন্য কোথাও গেলে অপরাধীরা ভাববে, মামলা করে ভয়ে পালাইছি। তাই এখন ভাবছি, এখানে থেকেই ওদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। দুশ্চিন্তা শুধু কলেজে ভর্তি নিয়ে। এই শহরের ভালো একটা কলেজে যদি ভর্তির ব্যবস্থা হতো!’

হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবদুল মোত্তালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মা-মেয়ে দুজনই এখন শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। তাঁরা চাইলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় যেতে পারবেন। আজকালের মধ্যে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

রিমান্ডে মুখ খুলছেন না তুফান ও নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া

ছাত্রী ধর্ষণ এবং পরে মা-মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার এবং তাঁর স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া আক্তারকে আবারও দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. আহসান হাবিবের আদালতে তাঁদের হাজির করা হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

একই আদালতে তুফান সরকারের সহযোগী মুন্না ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেন তুফানের আরেক সহযোগী আতিক ও নাপিত জীবন রবি দাস।

মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা ও বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে তুফান ও মার্জিয়া মুখ খুলছেন না। দুজনের রিমান্ড শেষে আজ রোববার আদালতে হাজির করে আবার রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ভুল সংশোধন

গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় ‘বগুড়ার রাজনীতি: চাঁদাবাজি-দখলে আ.লীগ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভুলবশত আবদুল মান্নান আকন্দকে বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।