শহীদুল্লাহ্‌ হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে বাঁধন সারা দেশে

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন সন্ধানী, বাঁধন, কোয়ান্টাম, রেড ক্রিসেন্ট যেকোনো জাতীয় দিবসে, উৎসব-অনুষ্ঠানে একসঙ্গে কাজ করে। সবাই মিলে রক্তদান কর্মসূচি পালন করে।

রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করছেন বাঁধনের কর্মীরা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৬ সালের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক ছাত্রের আত্মীয় ঢাকায় এসেছেন। হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হবে। প্রচুর রক্ত প্রয়োজন। ছুটতে ছুটতে ওই ছাত্র গেলেন শহীদুল্লাহ্‌ হলের আবাসিক ছাত্র প্রাণরসায়ন বিভাগের মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলামের (রিপন) কাছে।

শাহিদুল প্রমাদ গুনলেন। একবারে লাগবে ১০-১২ ব্যাগ রক্ত। কোথা থেকে জোগাড় হবে এত রক্ত! রোগী কি তাহলে বাঁচবে না?

যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একমাত্র সংগঠন বলতে গেলে ১৯৭৭ সালে গড়ে ওঠা সন্ধানী। একদিকে রক্তদান সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করা, অন্যদিকে পেশাদার রক্তদাতাদের প্রতিহত করার কাজ করছিল তারা।

শাহিদুল দমে গেলেন না। রক্তের খোঁজ চলল। সেই সঙ্গে তিনি ভাবলেন, কোন ছাত্রের রক্তের গ্রুপ কী, রক্ত দেওয়ার উপযুক্ত কারা, এমন একটা হলভিত্তিক তালিকা হাতে থাকলে বেশ হতো। রক্তের খোঁজে আর এভাবে এক হল থেকে অন্য হলে ছোটাছুটি করতে হতো না।

ভাবনাটা তিনি হলের বন্ধুবান্ধব, বড় ভাইদের জানালেন। মোটামুটি সবাই একমত। এবার বাস্তবায়নের পালা। মূল ভবনের ৩০৭ নম্বর কক্ষে একের পর এক বৈঠক হতে লাগল। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গেল একটা সংগঠন।

বাঁধন এমন এক সংগঠন, যাকে নিয়ে দেশ গর্ব করতে পারে। পুরোপুরি স্বেচ্ছাশ্রমে চলা ছাত্রছাত্রীদের এই সংগঠন যেভাবে এখনো কাজ করে চলেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু ভালো লাগা থেকে তিনি নিজেও এই সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রফেসর ইমেরিটাস

বাঁধনের উদ্যোক্তা শাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এক বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে বাঁধনের জন্ম। প্রথমে বাঁধন ছিল শহীদুল্লাহ্‌ হলকেন্দ্রিক। পাঁচ মাসের মাথায় ফজলুল হক মুসলিম হল ইউনিট চালু হলো। এরপর প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে হলে ইউনিট চালু হতে লাগল। একটা স্লোগানও ঠিক হলো, ‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন।’

শহীদুল্লাহ্‌ হলের সেই ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বাঁধন এখন ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত ২৫ বছরে প্রায় ২১ লাখ মানুষের রক্তের গ্রুপ বিনা মূল্যে নির্ণয় করে দিয়েছে বাঁধন, জোগাড় করেছে প্রায় ১০ লাখ ব্যাগ রক্ত। সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন ২ হাজার ৪৪৩ জন স্বেচ্ছাসেবী।

এ বছর এই সংগঠনের বয়স হবে ২৫ বছর। আজ ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের দিন থেকে বাঁধন তার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন শুরু করবে। একটি স্লোগানও ঠিক করেছে তারা, ‘৫০ পেরিয়ে বাংলাদেশ, ২৫–এ বাঁধন/ স্বেচ্ছায় রক্তদান হোক সামাজিক আন্দোলন।’ এ বছর রক্তদান সম্পর্কে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে জানানো, রক্তের গ্রুপ বিনা মূল্যে নির্ণয় করা ও রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ানো আরও বেশি মনোযোগ পাবে। নিয়মিত কাজের পাশাপাশি এ বছর সংগঠনটি ২৫ হাজার গাছ লাগানো ও ২৫ বারের বেশি যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, তাঁদের সম্মাননা দেবে। জোরেশোরে চলছে সেই প্রস্তুতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রফেসর ইমেরিটাস এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধন এমন এক সংগঠন, যাকে নিয়ে দেশ গর্ব করতে পারে। পুরোপুরি স্বেচ্ছাশ্রমে চলা ছাত্রছাত্রীদের এই সংগঠন যেভাবে এখনো কাজ করে চলেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু ভালো লাগা থেকে তিনি নিজেও এই সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

যেভাবে কাজ করে বাঁধন, যা যা করে

১৯৯৬ সালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কাছের কেন্দ্র ছিল এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল। গ্রুপ পরীক্ষায় খরচ হতো ৬০ টাকা আর দুবার রিকশায় যাতায়াতে ৪০ টাকা। খরচ বেশি হওয়ায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করিয়ে তালিকা তৈরির কাজটা কঠিন হয়ে গেল।

১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে রক্ত পরীক্ষা করতে শেখেন তাঁদের ক্লাসেই। রক্ত পরীক্ষার কাজটা আসলে খুবই সহজ। তাঁরা নিজেরাই শিখে নেবেন।

পরে খোঁজখবর নিয়ে রিএজেন্ট ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করলেন ছাত্ররা। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর শহীদুল্লাহ্‌ হলে প্রথমবারের মতো বেশ বড় পরিসরে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হলো বিনা মূল্যে। এরও কয়েক মাস আগে কাজ শুরু করেছিল বাঁধন। তবে জন্মদিন হিসেবে পালন করে এই দিনকেই।

বাঁধনের স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের মূল কাজ বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, পয়লা বৈশাখ, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মতো দিনগুলোতে বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির বিশেষ আয়োজন করে সংগঠনটি।

চার মাস পরপর রক্ত দিলে কিছু হয় না, ওজন ৪৫ কেজির বেশি আর বয়স ১৮–এর ওপর হলে যেকোনো সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারেন, চলে সেই প্রচারও।

প্রথম আলোকে বলেন, একটা সময় সত্যিই খুব কষ্টকর ছিল। কিন্তু এখন সংগঠন বড় হয়েছে। ঢাকার ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাঁধন আছে। রোগীর সবচেয়ে কাছে যে রক্তদাতা আছেন, তিনিই এগিয়ে আসেন।
মো. আল আমিন, শহীদুল্লাহ্‌ হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপদেষ্টা

স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, মূলত বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার সময়ই সম্ভাব্য রক্তদাতাদের একটা তথ্যভান্ডার তৈরি করে নেন বাঁধনের কর্মীরা। রক্তের প্রয়োজনে কেউ বাঁধনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা তথ্যভান্ডারে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

প্রতিবছরই বাঁধন রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা ও রক্ত সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়েছে। যেমন ১৯৯৭ সালে বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়েছিল ৪৫০ জনের আর রক্ত সরবরাহ করা হয়েছিল ৩০০ ব্যাগ। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ থেকে ২ লাখ ৮৪০ জন পর্যন্ত। এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর বাঁধন ৬০ হাজার ব্যাগের বেশি রক্ত সরবরাহ করেছে।

রক্ত সংগ্রহ করাটা কতটা কঠিন? তা ছাড়া ঢাকা শহরের যানজট ঠেলে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দেওয়াটাই–বা কতটা
হয়ে ওঠে?

শহীদুল্লাহ্‌ হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপদেষ্টা মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, একটা সময় সত্যিই খুব কষ্টকর ছিল। কিন্তু এখন সংগঠন বড় হয়েছে। ঢাকার ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাঁধন আছে। রোগীর সবচেয়ে কাছে যে রক্তদাতা আছেন, তিনিই এগিয়ে আসেন।

স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, শেষবার রক্ত দেওয়ার পর চার মাস হয়েছে কি না, সংগঠনের কাছে সে হিসাব থাকে। কিন্তু এত নিবেদিতপ্রাণ রক্তদাতা আছেন! তাঁরা নিজেরাই সংগঠনে জানিয়ে রাখেন, রক্ত দেওয়ার সময় হয়েছে।

তা ছাড়া নতুন করে বাঁধন নিজস্ব ট্রান্সফিউশন সেন্টার করেছে। বাঁধনের সাবেক কর্মী ও বেশ কিছু সংগঠনের আনুকূল্যে তৈরি এই সেন্টারে রক্ত সংগ্রহ ও স্বল্প সময়ের জন্য জমা রাখা হয়। এই সেন্টারে বাঁধনের কমিটিতে থাকা সাবেক সদস্যরা ব্যবস্থাপক হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দেন। রক্ত সংগ্রহের কাজ করে দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিরুজ্জামান মারুফ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের কাজটাও অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রমের মতোই।

কোভিডকালে বাঁধনের তৎপরতা

কোভিড থেকে সেরে ওঠা মানুষের প্লাজমায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা দ্রুত সেরে উঠছেন। এই খবর জানার পরই বাঁধনের সাবেক ও বর্তমান কর্মীরা প্লাজমা সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। বেশ কিছু সংগঠন সহযোগিতাও করে বাঁধনকে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের চিকিৎসক আশরাফুল হক বাঁধনকর্মীদের পাশে এ সময় ছায়া হয়ে ছিলেন।

প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের সমন্বয়ক মীর নাইমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধনের সাবেক কর্মী ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক পারভেজ রেজা নিয়মিত সেরে ওঠা রোগীদের নাম-ঠিকানা সরবরাহ করতেন। সেগুলো ধরে ধরে বাঁধন যোগাযোগ করত সেরে ওঠা মানুষের সঙ্গে। তাঁদের প্লাজমা দিতে উদ্বুদ্ধ করত। করোনার সময় বাঁধন ৩২২ জনকে প্লাজমা দিতে পেরেছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে আসায় এখন প্লাজমা সংগ্রহের কাজ বন্ধ আছে।

বছরজুড়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্তদাতা বাছাই, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন। ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপ পড়ে যাচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাঁধনের স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, জরুরি সময়ে মানুষ পাগলের মতো রক্ত খোঁজে। এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে বিপন্ন মানুষের চোখে-মুখে যে শান্তি দেখা যায়, তার কোনো তুলনা নেই।

স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, কখনো কখনো রক্ত পেয়েও রোগী বাঁচেন না। এই কষ্টের সীমা নেই।

বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফলিত গণিত বিভাগের ছাত্র মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ হোসাইনও বললেন, তবু দুদণ্ড শান্তি পেতেই সবাই বাঁধনে আসেন। তিনিও এসেছিলেন। ২৫ বছর আগে যাঁরা শুরু করেছিলেন, তাঁদের আসাও একই কারণে। এখনো অনেকেই নিয়মিত আসেন, দিকনির্দেশনা দেন। বিপদে-আপদে তাঁরা বাঁধনের বড় ভাই-বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

কী করে যুক্ত হলেন এই আন্দোলনে? শাহনেওয়াজ জানান, চিকিৎসক বড় ভাই সন্ধানী করতেন। তিনিই উৎসাহদাতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ফজলুল হক মুসলিম হলে একদিন বাঁধনের একটা কর্মিসভার নোটিশ দেখে হাজির হন তিনি। দেখেন, যে যত রক্ত সংগ্রহ করেছে, তাকে তত জোরে হাততালি দেওয়া হচ্ছে। যারা পারেনি, তাদের দেওয়া হচ্ছে উৎসাহ। বড় ভাইয়েরা বলছেন, পরের বার নিশ্চয়ই হবে। এসব দেখে শিহরিত হন তিনি।

বাঁধন ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারে বাঁধনের স্বেচ্ছাসেবীরা পুরোনো কর্মীদের কথা বারবার বলছিলেন। তাঁদের গল্পে উঠে আসে ফজলুল হক মুসলিম হল ইউনিটের সাবেক সভাপতি এ এইচ এম সাইফুল্লাহ হাবীবের কথা। এখন আনসার ও ভিডিপিতে আছেন তিনি। নাম এল বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি মেহেরুন্নেসা রোজীরও। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তাঁদের কারও ওজনই ৪৫ কেজি ছিল না। কিন্তু রক্ত সংগ্রহে তাঁরা ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে।

সন্ধানী, বাঁধন, কোয়ান্টাম, রেড ক্রিসেন্ট চলছে হাতে হাত রেখে

সন্ধানীর সদ্য সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান মিলন বলছিলেন, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠনগুলো হাতে হাত রেখে চলে। সন্ধানী স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারও পেয়েছে। এখনো কাজ করছে। যেকোনো জাতীয় দিবসে, উৎসব-অনুষ্ঠানে সংগঠনগুলো একসঙ্গে কাজ করে। সবাই মিলে রক্তদান কর্মসূচি পালন করে।

এই সন্ধানীর শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রের বাবার জন্য রক্তের প্রয়োজন থেকে। পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে অনিরাপদ রক্ত নেবেন না, এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই ছাত্র ও তাঁর বন্ধুরা।

সে বছরেরই ২ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল কাদেরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ছাত্ররা বাংলাদেশে প্রথম ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’র আয়োজন করেন।

সন্ধানীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইদ্রিস আলী মঞ্জু সবার আগে রক্তদান করেন। মেয়েদের মধ্যে প্রথম এগিয়ে আসেন ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হোসনে আরা লাকী। ওই দিন ২৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল। এই দিনে সরকারিভাবে ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’ পালন করা হয় দেশজুড়ে। প্রতিবছর সন্ধানী প্রায় দেড় লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে।

এই আন্দোলনের সক্রিয় আরেক অংশীদার কোয়ান্টাম। ২০০০ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত কোয়ান্টাম ১৪ লাখ ৩৮৪ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করেছে। রক্ত সংগ্রহ করেছে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৮০৪ ব্যাগ। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে যুক্ত আছে রেড ক্রিসেন্টও।

তারপরও চাহিদা মিটছে না। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের চিকিৎসক আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বছরে গড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত পাওয়া যায়। চাহিদা এর দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে। যাঁদের অবকাঠামো নেই, তাঁরা ঠিকঠাক রক্ত সংরক্ষণ করতে পারেন না। এতে রক্তের গুণগত মান বজায় থাকে না। রক্ত দেওয়ার আগে দাতাদের একটা স্ক্রিনিং করা হয়। রোগ থাকলে ওই স্ক্রিনিংয়ে ধরা পড়ার কথা। এ–সংক্রান্ত যেসব যন্ত্রপাতি বাজারে আছে, তার বড় অংশই মানহীন। ফলে রক্তদাতারা এ সম্পর্কে জানতে পারেন না।

তিনি বললেন, ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রক্ত চেয়ে অনেকে পোস্ট দেন। সুবিধাবাদী লোকজন এখানেও আছেন। অনেকেই রক্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেন। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কাজের প্রশংসা করলেন তিনি। আশরাফুল বলেন, তাদের কেউ কেউ খুবই সুন্দরভাবে কাজ করছে।