শহীদ বুদ্ধিজীবীর দেহাবশেষ দেশে আনতে চায় পরিবার

আবদুল ওয়াহাব তালুকদার

মুজিব বর্ষ শেষের আগেই শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল ওয়াহাব তালুকদারের দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে কবর দিতে চায় পরিবার। ইতিমধ্যে ভারতে তাঁর কবর চিহ্নিত হয়েছে। যথাযথ মর্যাদায় তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আবদুল ওয়াহাব তালুকদার কুড়িগ্রাম কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে তিনি নিজ গ্রামে চলে যান। ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের কিছুদিন পর তিনি ভারতে চলে যান। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। পরে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন বামনহাট যুব শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ নিযুক্ত হন। ৭ আগস্ট সকালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এক রেলসেতুতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলকে দেখতে এসেছিলেন তিনি।

মিজানুর রহমান বলেন, এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করে। একপর্যায়ে আবদুল ওয়াহাব গুলিতে আহত হন। ওই এলাকায় রেললাইন ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ। তিনি দৌড়ে জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। সেনারা জঙ্গল থেকে তাঁকে খুঁজে বের করে। সেখানেই তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর মরদেহ একটি ডোবায় ফেলে চলে যায় পাকিস্তানি সেনারা। পরে মরদেহ উদ্ধার হয় ভারতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার অন্তর্গত বগনী নদীর কিনারে কালমাটি মসজিদ চত্বরে (ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার পিলার নং ৯৫৪ সংলগ্ন) শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল ওয়াহাব তালুকদারকে সমাহিত করা হয়।

এই শহীদ বুদ্ধিজীবীর দেহাবশেষ ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে পুনরায় সমাহিত করার জন্য তাঁর স্ত্রী বেগম মেশরুন নাহার ও ছেলে মিজানুর রহমান ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় আবেদন করেন। কবরটি ভারতে হওয়ায় তাঁরা কবর জিয়ারত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছিলেন না। তাঁরা বলেছেন, নদীভাঙনের কারণে কবরটি এখন হুমকির মুখে।

গত বছরের ১২ অক্টোবর শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিবারের আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক) দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর নিয়ে তথ্য জোগাড় করেছেন, কবরগুলো চিহ্নিত করার বিষয়ে কাজ করেছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে দাফনের বিষয়ে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁকে আবদুল ওয়াহাবের বিষয়ে তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি গত বছরের ২৮ অক্টোবর লিখিত মতামতে জানিয়েছেন, তিনি সশরীর বিজিবি, বিএসএফ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শহীদ বুদ্ধিজীবীর তিনজন নিকটাত্মীয়, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা অধিনায়ক, দুজন স্থানীয় শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে কবরটি চিহ্নিত করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর দেহাবশেষ বাংলাদেশে আনার পর কোথায় সমাহিত করা হবে, সেই সম্ভাব্য স্থান পরিবারের সঙ্গে থেকে ঠিক করা হয়েছে। ফলে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনকে ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে আবদুল ওয়াহাব তালুকদারের দেহাবশেষ দেশে আনার ব্যাপারে অনুরোধ করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীর বড় ছেলে মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই, মুজিব বর্ষ শেষ হওয়ার আগেই বাবার দেহাবশেষ বাংলাদেশে পুনঃসমাহিত করা হোক। এখন তো কবরও চিহ্নিত হয়েছে। তাঁকে কুড়িগ্রামেই পুনঃসমাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আমাদের আশা, মার্চের আগেই তা সম্ভব হবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে এনে পুনঃসমাহিত করা যায়। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ আলী জহিরকে সম্পৃক্ত করে কলকাতার উপহাইকমিশনকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্ম সম্পাদন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’