শহীদ মিনারে কয়েক ঘণ্টা

ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সব বয়সীদের ঢল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সব বয়সীদের ঢল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

গায়ের জামাটি স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণে ভরা। মুখটিও বাদ নেই। পুরো বর্ণময় রৌদ্র হাসান। গুটি গুটি পায়ে বাবার হাত ধরে শহীদ মিনার থেকে নামছে। মুখের বোল এখনো ভালোভাবে ফোটেনি। তবু সাতসকালে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বাবার সঙ্গে চলে এসেছে।

গত রাতের প্রথম প্রহর থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মানুষের ঢল। কেউ মিছিলে বিশাল ফুলের তোড়ার সঙ্গে, কারও হাতে একটি ফুল, কেউবা ছোট তোড়া নিয়েই মিনারের দিকে এগিয়ে চলেছে। রৌদ্রের মতো অনেক মা-বাবাই সন্তানদের শহীদ মিনারে নিয়ে এসেছেন।

সায়মা আক্তার পলাশীর মোড় থেকে লাইন ধরে এগোচ্ছেন। সঙ্গে পাঁচ বছরের মেয়ে সুহানা সোমা। তিনি বলেন, ‘বইয়ের পাতায় তো এসব ওরা পড়েই। কিন্তু বইয়ের পড়ার চেয়ে আমি যদি ওকে এখানে নিয়ে এসে ইতিহাসটা জানাই, নিজের চোখে দেখাই, ও সারা জীবন মনে রাখবে।’ তিনি বলেন, এত ভিড়ে কষ্ট হলেও আগামী প্রজন্ম বুঝতে পারবে শহীদদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বিষয়টি।

১৬ বছর ধরে ঢাকার শহীদ মিনারে আসেন মো. সুহাইল। গতবার থেকে ছেলে ওয়াসি ইবনে সুহাইলকে নিয়ে এসেছিলেন। তিন বছরের ওয়াসি বলে, সে সবাইকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে। সুহাইল বলেন, ‘রাজশাহীতে থাকতে ছোটবেলায় দল বেঁধে শহীদ মিনার যেতাম। চেষ্টা করছি ছেলেকেও একুশ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো এখন থেকেই জানাতে।’

সাতসকালে শিশুরাও হাজির ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সাতসকালে শিশুরাও হাজির ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে। কেউ শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরছে, কেউ ভিড় কমার অপেক্ষা করছে।

লালবাগ থেকে তিন স্কুলপড়ুয়া বন্ধু ইয়াসিন, আসমা ও রেহানা এসেছে। কিন্তু ভিড় ঠেলে এগোতে না পেরে রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে আছে। তিনজনেরই মন খারাপ। গতকাল থেকেই ফুল জোগাড়সহ নানান প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু শহীদ মিনার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে কি না, সেই চিন্তা তাদের।

একদিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে, অন্যদিকে সেই ফুল শহীদ মিনার থেকেই পথশিশুদের হাতে চলে যাচ্ছে। তিনজন এ রকম মিনার থেকে ফুল এনে রাস্তার পাশে বিক্রির জন্য বসেছে। এদের একজন জীবন বলে, ‘ওইখানের ভাইয়েরাই আমাদের হাতে দিয়ে দেয়। কেউ কিছু কয় না।’ শ্রদ্ধা জানাতে আসা কয়েকজন এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। কামাল আহমদে নামের একজন বলেন, ‘এখনো শ্রদ্ধা জানানো শেষ হয়নি। তার আগেই এসব শুরু হয়ে গেছে। অন্তত আজকের দিনটা তো অপেক্ষা করতে পারত।’