শাম্মীর কবিতা নিয়ে হইচই, পরে এক্সপাঞ্জ

আজও বিরোধীদলীয় সাংসদের বক্তব্যের পরে সংসদে হট্টগোল শুরু হয়।তবে ওই অসংসদীয় ভাষা স্পিকার এক্সপাঞ্জ করেন।

বিএনপির সাংসদ শাম্মী আক্তার আজ কবি হেলাল হাফিজের কবিতা দিয়ে তার বাজেটের ওপর বক্তব্য শেষ করেন। আবৃত্তি করেন, ‘গুছাইয়া গাছাইয়া লন, বেশি দিন পাইবেন না/ আলামত যা দেখতাছি মানুষের হইবোই জয়/আমিও গ্রামের পোলা, চুতমারানি গাল দিতে জানি...এই কবিতার গালি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের সদস্যরা হইচই শুরু করেন, বলতে থাকেন ছিছি..। আর বিরোধী দলের সদস্যরা সহাস্যে টেবিল চাপড়ে শাম্মী আক্তারকে সমর্থন করতে থাকেন।

শাম্মী আক্তারের বক্তব্যের শেষে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আপনার বক্তব্যে কিছু অসংসদীয় শব্দ রয়েছে, যা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শাম্মী আক্তারের বক্তব্যের সময় সংসদে ছিলেন না। তবে বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন।

এর আগেও শাম্মী আক্তারের বক্তব্যে কিছু অসংসদীয় ভাষা ও ইঙ্গিত থাকায় স্পিকার আজ বুধবার এক দফা মাইক বন্ধ করে দেন। সে সময় শাম্মী আক্তার তাঁর বক্তব্যের মধ্যে বলছিলেন, ‘গালি গালি মে স্যোর হ্যায়, আওয়ামী লীগ চোর হ্যায়।’ স্পিকার এসময় বলেন, ‘আপনি বাজেটের ওপর আলোচনা করেন মাননীয় সংসদ সদস্য।’ পরে আবার মাইক দেওয়া হয়। তারও আগে স্পিকার শাম্মী আক্তারকে আরও একবার বাজেটের ওপর আলোচনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন স্পিকার।

এর আগে স্পিকার জাতীয় সংসদে সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাদের অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারের ওপর রুলিং দেন। তবে পরবর্তী দিন থেকেই আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করছেন দুই দলই।

শাম্মী আক্তার শুরুতেই খুবই আগ্রাসী ও ক্ষিপ্র গতিতে তাঁর বক্তব্য দিতে শুরু করেন। শুরুতেই তিনি স্পিকারকে ‘ঝাঁসিকি রানী, লক্ষ্মী বাই’ উল্লেখ করেন। বলেন, ‘আপনি সৌভাগ্যবান’। তিনি বাজেটকে লোপাটের বাজেট উল্লেখ করেন। বলেন, আওয়ামী লীগের বিশাল-কর্মী বাহিনী, ‘চাপাতী লীগ’, ‘ধর্ষক লীগ’, ‘রামদা লীগ’, ‘চাঁদাবাজি লীগ’। তার জন্য বড় বাজেট লাগবে। টিপাই মুখ বাদ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে সরকার। শাম্মী আক্তার বলেন, তারা মনে করেন ইলিয়াস আলী সরকারের কাছে আছে। এই সরকারের আমলে বিডিআরে হত্যা, বিশ্বজিত্ হত্যা শুধু হত্যা, হত্যা, হত্যা হয়েছে। আর কত রক্ত প্রয়োজন গণতন্ত্রের জন্য?

এ পর্যায়ে স্পিকার তাঁকে এক দফা বলেন, আপনি বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। শাম্মী আক্তার বলেন, বাজেট নিয়ে আলোচনা পরে করব। আগে রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলি।

শাম্মী আক্তার বলেন, ধানাই-পানাই বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় নির্বাচন দিন। তিনি বলেন, লজ্জা করে না, চার সিটি করপোরেশনের পরাজয়ের পর এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন না করার পরিকল্পনা করছে। জনগণ এই নির্বাচন চায়, দিতে হবে। এরপর তিনি হেলাল হাফিজের কবিতা আবৃত্তি করে তার বক্তব্য শেষ করেন।

তার আগে বিএনপির আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, সুন্দরভাবে ভোট হওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক বলুন আর যাই বলুন, সমঝোতার ভিত্তিতে একটা নির্দলীয় সরকার করুন।

আওয়ামী লীগের নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট হয়ে গেছে। এখন বিশ্বব্যাপী প্র্যাকটিসের সাথে মিলিয়ে নির্বাচন করতে হবে।

সরকার দলীয় সদস্য সানজিদা খানম বিএনপির উদ্দেশে বলেন, আপনারা তত্ত্বাবধায়কের কথা বলছেন, আবার তারেক রহমানকে বীরের বেশে দেশে আনতে চাচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণেই তারেক রহমানকে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের এ বি এম আনোয়ারুল হক বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে বলেন, কবি জসীমউদ্দিন বেঁচে থাকলে আজ তাঁর আদরের জামাতাকে দেখে দুঃখ পেতেন। তার জামাতার রাজনীতি আজ দেশকে লুট করে ফোকলা করে দিয়েছে। জসীমউদ্দিন বেঁচে থাকলে তার জামাতার রাজনীতি দেখে লিখতেন ‘ভঙে দাও এই লুটেরার রাজ্য।’

বিএনপির নাজিম উদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘অবলা নারী’ বলে মন্তব্য করে বলেন, তিনি মীরজাফরদের নিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন।

সরকারি দলের আব্দুল আউয়াল বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন, তারা চিত্কার, অশ্লীল বক্তব্য দিলেও আমরা দেব না। বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিরোধী দল জিতলে সুষ্ঠু, না জিতলে কারচুপি।

সংসদে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, হাবিবর রহমান, নুরুন নবী চৌধুরী শাওন, রফিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাতীয় পার্টির নওয়াব আলী আব্বাস খান প্রমুখ।