শাহজালালে শুরু হয়নি করোনা পরীক্ষা, আমিরাতে বিশেষ ফ্লাইটও বন্ধ

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফাইল ছবি

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার পদ্ধতিতে এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের সম্মতি পাওয়া যায়নি। ফলে আজ মঙ্গলবারও বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়নি। আরব আমিরাত সরকারের অনুমতি এলেই ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এদিকে আমিরাতে পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ ফ্লাইটও বন্ধ করা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা ও ফ্লাইট চালু নিয়ে অগ্রগতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, আরব আমিরাতের নির্দেশনা অনুসারে, বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ থেকে তা শুরু হওয়ার কথা ছিল। সংগত কারণে আজ যাত্রীরা যেতে পারছেন না। এর কারণ হলো, বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষায় জন্য নির্বাচিত ছয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরে (এসওপি) আমিরাতের সম্মতি থাকতে হবে। এটি দুই সপ্তাহ আগেই পাঠানো হয়েছিল। সেখানে এটা এখনো বিবেচনাধীন আছে। এসওপির সম্মতি দ্রুত পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসওপি সম্মতি না পাওয়ায় ফ্লাইট শুরু করা যায়নি।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকেও এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল। আমি সেটি বাতিল করে দিয়েছি। তাদের একটু চাপে রাখার কারণে এটা করেছি। বিমানবন্দরে যে ছয় প্রতিষ্ঠানের ল্যাব আছে, এগুলোর যদি অনুমোদন আজ বিকেলের মধ্যে হয়, তাহলেই ফ্লাইট চালু হবে। বিশেষ ফ্লাইট আপাতত আর দেব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক যে ল্যাবটি বসানো হয়েছে বিমানবন্দরে, সেটা যেন সবাই ব্যবহার করে যাত্রীরা বাইরে যেতে পারেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ২১ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন, আমিরাতে এসওপি একটা পাঠানো হবে। কিন্তু সম্মতির জন্য কেন ছয় প্রতিষ্ঠানের ছয়টি এসওপি আমিরাতে পাঠানো হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, করোনা পরীক্ষায় ছয়টি প্রতিষ্ঠান কেন, সে প্রশ্ন তুলেছিল আমিরাত। একটা প্রতিষ্ঠান হলে আমিরাতের সুবিধা হবে। ছয় প্রতিষ্ঠানের একেক প্রতিষ্ঠানের একেক ধরনের যন্ত্র। এটার টেকনিক্যাল দিকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমিরাত জানতে চেয়েছে কে কীভাবে করতে চায়, এ জন্যই ছয়টি আলাদা এসওপি হয়েছে।’

বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, আরব আমিরাতের অনুরোধে ও এমিরেটস এয়ারলাইনসের উদ্যোগে কয়েকটা ফ্লাইট গিয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। এসব ফ্লাইটে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এবং কিছু জরুরি কিছু যাত্রীদের পাঠাতে ব্যবস্থা করে দূতাবাস। ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে (ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক) নির্বাচিত করে আমিরাত। সে প্রতিষ্ঠানে করোনার পরীক্ষা করে তাঁদের আমিরাতে পাঠানো হয়েছে। দুটি ফ্লাইট এভাবে গিয়েছে। বেবিচক তাদের অনুরোধ রক্ষা করেছে। মফিদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিইনি। অনুমোদন দিয়েছি শুধু বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য।’

অনিশ্চয়তায় প্রবাসী কর্মীরা

এদিকে বিমানবন্দরে কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু হবে, তা জানতে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রবাসী কর্মীরা প্রতিদিন বিমানবন্দরে আসছেন। আজও এসেছিলেন কয়েকজন। তেমনই একজন গাজীপুরের বড়বাড়ির বাসিন্দা মো. গিয়াস উদ্দিন। ৩৪ বছর বয়সী গিয়াস আমিরাতে রডমিস্ত্রির কাজ করতেন। ছয় মাস আগে তিনি দেশে আসেন। নিয়োগকর্তা কাজে ফিরতে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গিয়াস।
কর্মস্থলে ফেরার কথা বলতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিন কেঁদে ফেলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিসিআর পরীক্ষার শুরু না হওয়ার কারণে আমরা যেতে পারছি না। প্রতিদিন ৭০ জন যাচ্ছে, তাঁরা কীভাবে যাচ্ছে? কিন্তু আমরা শ্রমিকেরা যেতে পারছি না। আমার ভিসার মেয়াদ আর তিন মাস আছে।’

শাহজালাল বিমানবন্দরে গত শনিবার থেকে করোনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। দুই দফা আশ্বাসের পর গত রোববার বেবিচক জানায়, আজ থেকে করোনা পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। তবে সেটিও আজ হয়নি।

এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাতে আমিরাতে পৌঁছান ৪৬ যাত্রী। শাহজালাল বিমানবন্দরে এসব যাত্রীর পরীক্ষামূলকভাবে করোনার পরীক্ষা করা হয়। আমিরাতে পৌঁছানোর পর তাঁদের আবার করোনা পরীক্ষা হয়। সেখানে ফল নেগেটিভ আসায় তাঁরা আমিরাতে প্রবেশের সুযোগ পান।

১৫ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর করোনা পরীক্ষার জন্য সাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ছয় প্রতিষ্ঠান ১৬ সেপ্টেম্বর এসওপি জমা দেয়। আমিরাতের সম্মতি না আসা বাকি পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো স্টেমজ হেলথকেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড।

গত আগস্টে আরব আমিরাত সে দেশে ভ্রমণের ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার শর্ত আরোপ করে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আমিরাতগামীরা দেশটিতে যেতে পারছেন না। এর মধ্যে কারও কারও ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে।

দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে দ্রুত করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের জন্য অনেক দিন ধরে দাবি করে আসছেন প্রবাসী কর্মীরা। ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি–পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশের ২৩ দিন পরও শাহজালাল বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষা পুরোদমে চালু করা যায়নি। শাহজালালে করোনার পরীক্ষা সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও দেশের আরও দুটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন পর্যন্ত পিসিআর যন্ত্র বসানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।