
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী সুরাইয়া সুলতানার (১৪) অপমৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে গতকাল রোববার বিক্ষোভ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে।
সহপাঠীদের দাবি, সিলেবাসের বাইরে গণিতের প্রশ্নপত্র হওয়ায় গত শনিবার নবম শ্রেণির বেশির ভাগ ছাত্রীর পরীক্ষা ভালো হয়নি। পরীক্ষার পর অভিভাবকেরা সুরাইয়াকে বকাঝকা করায় অভিমানে সে আত্মহত্যা করে। প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সুরাইয়ার বাবা শরিফুল ইসলাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কর্মচারী। তাঁরা শহরের সবুজ পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার পিরপুর গ্রামে। গতকাল ওই গ্রামে সুরাইয়াকে দাফন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সুরাইয়ার বাবার বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সুরাইয়া ঘরের সিলিং ফ্যানের রিংয়ে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে। পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় তাঁরা মেয়েটিকে বকাঝকা করেছিলেন। আজ (গতকাল) সকালে মরদেহ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা একটায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তারা দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। অভিভাবকদের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফি উল্লাহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে শিক্ষক, কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে নিয়ে বৈঠকে বসেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, বিদ্যালয় থেকে জোর করে উচ্চমূল্যের গাইড বই চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বই কিনতে পারে না। এ জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কটুকথা বলেন। মূল বইয়ের পরিবর্তে পরীক্ষায় গাইড বই থেকে প্রশ্ন তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। তাঁদের কাছে না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।
বৈঠকের পর বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাময়া ইউনুস পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজগর আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে এখানে এসেছি। এসব অভিযোগের বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’