শিক্ষার মানে অবনতি, দরকার মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ: ইউজিসি চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ।

দেশে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটেছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের ৫০ শতাংশ নির্ভর করে গুণগত শিক্ষক নিয়োগের ওপর। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরোপুরি কৃতিত্বের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো চাপ বা প্রভাব থাকা যাবে না।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করছে। গত পাঁচ মাসে পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক তিন দিনব্যাপী ওয়েবিনার হয়েছে। এর শেষ ধাপে ‘উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ’ বিষয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারের সোমবার ছিল সমাপনী দিন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটেছে, এটি বলার জন্য আমাদের কোনো বিদেশি পণ্ডিতের প্রয়োজন নেই। আমরা নিজেরাই এটা জানি। শিক্ষার মানোন্নয়নে কেউ বলেন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কেউবা বলেন অবকাঠামো উন্নয়নের কথা। আমি মনে করি না এগুলো এ ক্ষেত্রে কোনো সাহায্য করবে। আমি মনে করি, শিক্ষার মানোন্নয়নের ৫০ শতাংশ নির্ভর করে গুণগত নিয়োগের ওপর। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরোপুরি কৃতিত্বের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো চাপ বা প্রভাব থাকা যাবে না। সেরা প্রার্থীদেরই শিক্ষকতায় নিতে হবে, যাঁদের শিক্ষকতায় অঙ্গীকার ও একাগ্র আছে।’
কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যখন শিক্ষকতায় এসেছিলাম, ধনী হওয়ার জন্য আসিনি। জানতাম যে শিক্ষকতায় যোগ দিলে সামনে অর্থনৈতিক সংগ্রাম অপেক্ষা করছে। তবু শিক্ষকতায় এসেছিলাম। কারণ, আমাদের আগ্রহ ছিল জ্ঞান, সৃষ্টিশীলতা ও একাডেমিক স্বাধীনতায়। আমরা কোনো হাইফাই জীবন চাইনি।’

অনলাইন শিক্ষা প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, সরাসরি ক্লাসের বিকল্প কিছু হতে পারে না। কিন্তু এ–ও উপলব্ধি করেন যে ভোক্তাবান্ধব প্রযুক্তির প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ইউজিসি শুরু থেকেই এ বিষয়ে সচেতন। নিজস্ব সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অনলাইন শিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ডিভাইস কেনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ শক্তিশালী নয়। সংযোগ সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে। তবে পুরো বিষয়টিকে উন্নত করতে আরও কিছু সময় লাগবে।

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হাবিবুল খন্দকার। তিনি বলেন, বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে এখন সৌদি আরবের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও জায়গা করে নেয়। তারা যেটি করে, তা হলো তাদের শিক্ষকদের প্রতিটি প্রকাশনার জন্য পুরস্কার হিসেবে চার-পাঁচ হাজার রিয়েল (সৌদি আরবের মুদ্রা) করে দেওয়া হয়। এটি মূলত জার্মান মডেল। অর্থনৈতিক প্রণোদনা বা অনুপ্রেরণা মানসম্পন্ন প্রকাশনাকে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশে গবেষণার উন্নয়নে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে অর্থনৈতিক প্রণোদনার বিষয়টি ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা উপলব্ধি করি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রয়োজন। এর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত বাজেট দরকার। যখন আমরা বিদেশি শিক্ষক নিতে চাই বা বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে ভর্তির আবেদন করে, তাদেরকে আমাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়। এসব বিষয় নিয়ে ভাবছি।’ সব ধরনের চেষ্টার পরও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ইফফত আরা নাসরীন এবং শতবর্ষের ওয়েবিনার আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বক্তব্য দেন।