শিল্পসামগ্রীর নান্দনিক সমারোহ

শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শনী দেখছেন এক দর্শক। গত মঙ্গলবারছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

পরপর কয়েকটি কালো কাপড়ের ফ্রেমের ওপর সাদা সুতির সেলাইয়ে ঢাকা শহরের মানচিত্রের সীমারেখা ফুটিয়ে তোলা। পাশেই আছে একটি হেডফোন। কানে নিলে তাতে শোনা যায় কিছু লোকের ক্ষুব্ধ কণ্ঠ, দাবি আদায়ের ঝাঁজালো স্লোগান, ওরে সাম্পানওয়ালা গানের সুরে প্যারোডি গান ‘ওরে গার্মেন্টসের চাকরি...’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের পথে বসে থাকা ১ হাজার ১০০ পোশাককর্মীর অনিশ্চিত জীবনের কথা। এসব নিয়েই ‘ঢাকা কত দূর’ নামের এই শিল্পকর্ম।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার পাঁচটি গ্যালারিতে বিভিন্ন মাধ্যমের ৩৪৭টি শিল্পকর্মের বৈচিত্র্যময় নান্দনিক উপস্থাপনা নিয়ে চলছে ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো সাজানো হয়েছে ১, ২, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর গ্যালারির ভেতরে এবং সামনের খোলা অংশে। এবার সব মাধ্যমে সেরা শিল্পীর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ হাসানুর রহমান। তাঁর বিশাল আকারের স্থাপনাকর্মটি রয়েছে তৃতীয় তলার গ্যালারির সামনেই। পুঁজিবাদী অর্থনীতি কীভাবে সবকিছু গ্রাস করে ফেলছে, সেই ভাবনা তিনি তুলে ধরেছেন মাছ ধরা ফাঁদের মতো একটি আকৃতির ভেতর দিয়ে।

করোনা সংক্রমণ এখন সবচেয়ে বড় সংকট। অনিবার্যভাবেই শিল্পীদের নান্দনিক ভাবনাতেও এর প্রভাব পড়েছে। চিত্রকলা, ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন মাধ্যমে করোনা নিয়ে অনেক রকমের কাজ করেছেন শিল্পীরা। আরও আছে যুদ্ধ, সন্ত্রাস, মৌলবাদ, উদ্বাস্তু সমস্যার মতো সামাজিক সংকট। আছে অপত্যস্নেহ, জীবনযাত্রার নানা অনুষঙ্গ, বিভিন্ন আঙ্গিকের অবয়ব, নিসর্গ, ভূদৃশ্য, রংরেখার বিমূর্ত বিন্যাস ও মুক্তিযুদ্ধের মতো চিরায়ত বিষয়গুলো।

এবারে প্রদর্শনীর বিশেষ সংযোজন ৬ নম্বর গ্যালারিতে কিউরেটরদের তত্ত্বাবধানে বিষয়ভিত্তিক শিল্পকর্মের উপস্থাপনা। এই পর্বেই রয়েছে প্রিয়াংকা চৌধুরী, প্রণবেশ দাস ও তৌকির আহমেদের ‘ঢাকা কত দূর’ নামের পোশাককর্মীদের নিয়ে করা মিশ্রমাধ্যমের কাজটি। ঢাকা শুধু রাজধানী নয়, বহু মানুষের গন্তব্যস্থল, তাদের জীবিকা ও স্বপ্নের ঠিকানা। পোশাককর্মীরাও বিধিনিষেধের সময় বহু পথ হেঁটে রাজধানীতে আসছিলেন। এই রাজধানী কীভাবে তাঁদের কাছে সাড়া দেয়, এসবই আছে এই শিল্পভাবনায়।

এবার জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে কিউরেটর পর্বে চারটি অংশ রয়েছে। অন্য অংশগুলোর মধ্যে শিল্পী কনকচাঁপা চাকমার কিউরেট করা অংশটির নাম ‘নশ্বর-অবিনশ্বর’। এতে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার নানা দিক তুলে ধরেছেন। তাঁদের বয়নকর্ম, কারুকর্মে এসব আছে।

প্রদর্শনীতে দর্শক আসছেন প্রচুর। সবার হাতেই এখন ক্যামেরাযুক্ত ফোন। তাই ছবির বা ভাস্কর্যের পাশে, সামনে দাঁড়িয়ে, এমনকি মেঝেতে বসেও ছবি তুলতে দেখা যাচ্ছে অনেক দর্শককে। প্রদর্শনী চলবে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।