শিশুদের স্বপ্নের ডানা ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে

শিশুদের কল্পনার জগৎটি অসাধারণ। শুধু পাঠ্যবইয়ের ভারে তাদের পীড়িত করা উচিত নয়। শিশুসাহিত্য শিশুদের কল্পনার জগৎকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু শিশুদের স্বপ্নের ডানা ছেঁটে দিয়ে তাদের জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শিশুর মেধা-মননকে এগিয়ে নিতে তার হাতে শিশুসাহিত্য তুলে দিতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে দুই দিনব্যাপী শিশুসাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণে এ সম্মেলনের আয়োজন করে চন্দ্রাবতী একাডেমি।
শিশুসাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, জাহীদ রেজা নূর ও এবি ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান কাজল ও শিশুসাহিত্য সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাশেদ রউফ।
অনুষ্ঠানে এবার চন্দ্রাবতী একাডেমি পুরস্কার পাওয়া লেখক সেলিনা হোসেন, আবুল মোমেন ও শাহজাহান কিবরিয়াকে সম্মাননা দেওয়া হয়। আবুল মোমেন ও সেলিনা হোসেনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন অনুপম সেন। তাঁদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কারের অর্থ তুলে দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি শাহজাহান কিবরিয়া। তাঁর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা শিশুসাহিত্যর প্রবহমান ধারা কখনো শুকিয়ে যায়নি। দেশভাগের পর বাংলাদেশে নানাজনের হাত ধরে এর স্ফুরণ ঘটেছে। তাঁদের কাউকে কাউকে চন্দ্রাবতী একাডেমি সম্মানিত করেছে। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে পরিণত হয়েছে। পুরস্কারের মূল্য অর্থের ওপর নির্ভর করে না, এটি নির্ভর করে কারা পাচ্ছেন তার ওপর। চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশুসাহিত্য সম্মেলন করছে, এটি শিশুসাহিত্যের জন্য নতুন প্রেরণা।
শিশুসাহিত্য শিশুর কল্পনার জগৎকে বাড়ায় বলে উল্লেখ করেন অনুপম সেন। তিনি বলেন, দেশভাগের পর শিশুসাহিত্যে নতুন নতুন উপাদান যোগ হয়েছে।
কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘শিশুর শৈশব এখন বন্দী। আমরা শিশুদের স্বপ্নের ডানা ছেঁটে দিচ্ছি, তাদের জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছি। সমাজ থেকে সাহিত্য পড়ার মনোভাব চলে যাচ্ছে। যারা বই পড়ে বড় হচ্ছে আর যারা বই না পড়ে বড় হচ্ছে, তাদের মধ্যে মূল্যবোধগত ফারাক তৈরি হচ্ছে। সাহিত্য দিয়ে শিশুদের মহত্ত্বের দিকে নেওয়া যায়, মানবতা তৈরি হয়। এই যেমন ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মতো সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ ছেলেটি মানবতার জন্য নিজের জীবন দিল।’
অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শিশুসাহিত্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের জন্য এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সাধ্যমতো শিশুসাহিত্যের পরিচর্যা করার চেষ্টা করেছি, এই পুরস্কার হয়তো সেই কাজের স্বীকৃতি।’
অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা জানান, ২০১৮ সালে বাংলা শিশুসাহিত্য প্রকাশনার ২০০ বছর পূর্ণ হবে। এটিকে সামনে রেখে চন্দ্রাবতী একাডেমি দুই বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এই সাহিত্য সম্মেলনের মাধ্যমে সে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হলো।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ ও সাহিত্য আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিশুসাহিত্যিক আসলাম সানী। আলোচক ছিলেন কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার।