সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের স্মরণসভা
সংকটের সুন্দর সমাধান দিতে জানতেন সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ
কেউ বলেছেন, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ। কারও অভিমত, তিনি সংকটের সুন্দর সমাধান দিতে জানতেন। আবার কারও মতে, সাংবাদিকেরা নানা মত ও পথে বিভক্ত থাকলেও সাংবাদিকদের মধ্যে একজন অবিভক্ত মানুষ ছিলেন তিনি। সবার কাছেই তিনি ছিলেন সম্মানের মানুষ। তিনি শুধু ভালো সাংবাদিক ও ভালো নেতাই ছিলেন না। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তিনি বেঁচে না থাকলেও তাঁর আদর্শ বেঁচে থাকবে।
সদ্য প্রয়াত একুশে পদক পাওয়া সাংবাদিক ও দ্য ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের স্মরণে আয়োজিত সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সাংবাদিক, সম্পাদক ও সংবাদপত্রের মালিকেরা। সম্পাদক পরিষদ ও নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) যৌথ উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় এ স্মরণসভা।
সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের অন্যতম সদস্য এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ গত শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
স্মরণসভায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ চাইলে রাজনীতি ও ব্যবসায়ও যেতে পারতেন। কিন্তু যেখান থেকে তাঁর উত্থান, সেই সাংবাদিকতাতেই থেকে গেলেন। তাঁর বড় বৈশিষ্ট্য হলো তিনি সাংবাদিক ছিলেন, সাংবাদিক হিসেবেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তাঁর আদর্শ বেঁচে থাকবে।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মতো এমন সজ্জন মানুষ কমই দেখেছেন বলে মন্তব্য করেন নোয়াবের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ খান বাদল।
যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আজকে সাংবাদিকতা নানা মত ও পথে বিভক্ত। কিন্তু রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিভক্ত সাংবাদিকদের মধ্যে একজন অবিভক্ত মানুষ ছিলেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতার সবকিছু স্পর্শ করেছেন বলে মন্তব্য করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, তিনি লিখেছেন, সম্পাদক ছিলেন, মালিকও ছিলেন। কীভাবে সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান করা যায়, সেদিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ একজন ভালো মানুষ, ভালো সাংবাদিক ও ভালো নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে নানা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ যেকোনো সমস্যার সুন্দর সমাধান করতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মকাণ্ডে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সবার আগে বিরুদ্ধ মত শোনার চেষ্টা করতেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে সম্মানের ব্যক্তি ছিলেন বলেন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক।
স্মরণসভায় অংশ নিয়ে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ তাঁর বাবার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। তাঁদেরও পরামর্শ দিতেন আত্মমর্যাদা ও জীবন চলার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে ও চলতে। একই সঙ্গে সততা, শিক্ষা ও কঠোর পরিশ্রমের পরামর্শ দিতেন। মৃত্যুর আগেও সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর ভালোবাসা একচুলও কমেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। স্মরণসভায় আলোচনার শুরুর দিকে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।