সংক্রমণ রুখতে অন্ধবিশ্বাস নয় প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ যা নভেল করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। ভয়, আতঙ্কের শেষ নেই। কোয়ারেন্টিন মানছে না বিদেশ ফেরত অধিকাংশ মানুষ। ফলে অনেকে অজান্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভাইরাসটি। এ মুহূর্তে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। তবু থামছে না মানুষের অবাধে ঘুরে বেড়ানো।

করোনা ভাইরাসে দুজন মারা যাওয়ার পর মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটন স্পটসহ বিভিন্ন পার্ক। হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বাইরে যেন বিদেশফেরত কেউ বের না হতে পারে সেদিকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা না মানায় অনেকের জেল-জরিমানা পর্যন্ত হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে। সকালে বিভিন্ন নিউজের মারফতে জানা গেল, অনেক জেলায় গণপরিবহন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে ক্রমেই মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাভাবিক কাজকর্মকে স্থগিত করে তুলেছে। অন্যদিকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে অনেকে গুজবে কান দিচ্ছেন। থানকুনি পাতায় নাকি ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে। আসলে এভাবে আমরা নিজেকে ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অন্ধবিশ্বাসে জড়িয়ে পড়ছি। করোনা প্রতিরোধে অন্ধবিশ্বাস কখনো সমাধান হতে পারে না। এটা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। অতএব সচেতনতাই কেবল পারে করোনা থেকে রক্ষা করতে।

ছোঁয়াচে রোগ বলে এ রোগ যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে অতএব মুষ্টিমেয় লোকজন সচেতন করা মানেই করোনা প্রতিরোধ হবে এমনটা ভাবা বোকামি। তাই গ্রাম পর্যায়েও করোনা সম্পর্কে সচেতনতা করা অত্যন্ত জরুরি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করা কিছুটা সম্ভব। যেহেতু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি তাই একমাত্র সচেতনতাই পারে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সচেতনতার বিকল্প কিছু হতে পারে না। অন্যান্য রাষ্ট্র যেখানে মৃত্যুর মিছিলে সেখানে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি। অতএব অনেক সীমাবদ্ধতা থাকবে তাই বলে সচেতনতায় যেন আমরা সীমাবদ্ধ না হই সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। অনেকে জ্বর-সর্দি মানেই করোনা আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের জন্য এ মুহূর্তে ঘরে বসেই নিজেকে পরিচর্যা করা উচিত। কারণ স্থানীয় হাসপাতালে এখন করোনা অনাক্রান্ত ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাগম থাকতে পারে ফলে অনাক্রান্ত ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি।

যেহেতু টেকনোলোজির যুগ অতএব টেকনোলজির দ্বারাও আমাদের সচেতনতা অব্যাহত রাখতে হবে। যেকোনো গুজব প্রতিরোধে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। ভাইরাস ঠেকাতে গিয়ে যদি শহরগুলো লকডাউন করতে হয় তাহলে এমন সাহসী পদক্ষেপ নিতেও সরকারকে প্রস্তুত হতে হবে।

আমরা জানি, কয়েক দিনে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভাইরাস প্রকোপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উচিত সকল ব্যাপারে যেন সতর্ক থাকে। কারণ করোনা প্রতিরোধ করতে গিয়ে যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় তাহলে না খেয়ে অনেক মানুষ তার অস্তিত্ব হারাবে যা বাংলাদেশের অবস্থা আরও অবনতির দিকে চলে যাবে।

এর মধ্যে যারা প্রতিনিয়ত গুজব ছড়াচ্ছেন এবং সহজ উপায়ে করোনা প্রতিরোধ করা যাবে বিভিন্ন ফতুয়া দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। কারণ তাদের জন্য সরকারের সচেতনতা বিফলে যেতে পারে। এতে ভাইরাসে সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে।

তা ছাড়া হাঁচি কাশি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সবার সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হাঁচি-কাশির মধ্য দিয়ে এটা বেশি ছড়ায়। অতএব যেকোনো কাজ করার পর কিংবা খাবার গ্রহণের পর অবশ্যই সাবান কিংবা ডেটল দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া দরকার।

অন্যদিকে প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে করোনার বিস্তার রোধে সার্জিকেল কিংবা মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন যা বাইরের ধুলাবালি ও হাঁচি-কাশির বিভিন্ন ভাইরাস রুখতে সাহায্য করে। তবে এসব নিয়মে করোনা প্রতিরোধ না হলেও সংক্রমণ কম হয়। মূলত ঘনঘন হাত ধোয়া এবং বিদেশফেরত অনেকের যার মধ্যে করোনার একাধিক লক্ষণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা না করা এই ভাইরাস সংক্রমণ হ্রাস করার সর্বোত্তম উপায়।