সমস্যা বাড়াবে বাইপাস সড়ক?

সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী শহরের বাঁকাল চেকপোস্ট থেকে বাইপাস সড়ক হচ্ছে না। নাগরিক কমিটির সদস্যরা বলছেন, বর্তমানের নকশায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে বাইপাস হলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যা দেখা দেবে। ফলে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্প উল্টো সমস্যা বাড়াবে।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের নকশাসহ অর্থ একনেকে অনুমোদন হয়। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ হবে। নাগরিক কমিটির শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। এখনই সুবিধা ও অসুবিধার কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এখন নকশা পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা শহরের বাঁকাল চেকপোস্ট থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের পশ্চিম দিকে মেডিকেল কলেজের সামনে বিলের মধ্যে মাটি ফেলে বাইপাস সড়ক কাজ করা হচ্ছে। এ সড়কের দুই পাশেই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্থাপনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাইপাস সড়কটি চালু হলে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক, বাসসহ দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করবে। মেডিকেল কলেজের একেবারে সামনে দিয়ে বাইপাস সড়ক হলে এখানে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটবে। পাশাপাশি ব্যস্ত সড়কটি দিয়ে ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ রোগীদের পারাপারে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ফাহিমুল হক বলেন, সাতক্ষীরা শহরের যানজট নিরসনে বাইপাস সড়কের দাবি প্রথম ওঠে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ১৯৯৬ সালে ভোমরা স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর এ দাবি আরও জোরালো হয়। ২০১০ সালের ২৩ জুলাই শ্যামনগরের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাইপাস সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দেন। এর পরপরই ১৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার বাঁকাল এলাকা থেকে লাবসা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন সড়ক হয়ে বিনেরপোতা বিসিক শিল্প নগরী পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
সাতক্ষীরা সওজ সূত্র বলছে, ১২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের এ বাইপাস সড়ক ও ৩৭টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৮৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগে জমি অধিগ্রহণের জন্য দেওয়া হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকা। বাইপাস নির্মাণের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ মাস। গত ৮ মার্চ সাতক্ষীরা সদরের সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব আলীনূর খান বলেন, ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার সভা হয়েছে। প্রতিটি সভাতেই বাঁকাল চেকপোস্ট থেকে বিনেরপোতা পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে। একটি মহলকে খুশি করতেই সাতক্ষীরাবাসীর দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁকাল চেকপোস্ট থেকে বাইপাস হলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলে অনেক জমি হারাতে হতো। সেটা ঠেকাতেই মহলটি ওপর মহলে তদবির করে নকশায় পরিবর্তন করিয়েছে।
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিছুর রহিম বলেন, বর্তমানের নকশায় বাইপাস হলে সাতক্ষীরাবাসীর উপকারে আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উল্টো এতে মেডিকেল কলেজে শিক্ষা ও চিকিৎসার পরিবেশ নষ্ট হবে। জনবহুল ওই এলাকায় বাড়বে সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী মহলটির জমি রক্ষা করতেই বাইপাস সড়কের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে মেডিকেলের সামনে দিয়ে যে কাজ হচ্ছে, সেটিকে মূল বাইপাসের একটি লিংক রোড করে মেডিকেলের পেছন দিয়ে বাঁকাল চেকপোস্ট পর্যন্ত বাইপাস সড়ক সম্প্রসারণের দাবি জানান আনিছুর রহিম।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সাংসদ শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, জেলা পর্যায়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এ কারণে ভোমরা স্থলবন্দর সড়কের সঙ্গে যুক্ত করেই বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কীভাবে সেই নকশা পরিবর্তন করা হলো সেটা তাঁর বোধগম্য নয়।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ আ ফ ম রুহুল হকও সম্প্রতি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।