সরকারি হাসপাতালে নারী-পুরুষ শয্যায় অসমতা

৯টি হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণ শয্যাসংখ্যায় নারী-পুরুষ সমতা নেই। হাসপাতালগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারীর শয্যা ১ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত কম।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের বাইরের করিডরের বেঞ্চে গুটিসুটি মেরে শুয়ে কাশছিল এক কিশোরী (১৭)। রাজধানীর মিরপুরের ওই বাসিন্দার সাত মাস আগে ফুসফুসের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। বেঞ্চের প্রান্তে বসে মা মেয়ের কঙ্কালসার দেহে হাত বুলিয়ে কিছুটা আরাম দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাবা শয্যার জন্য ছোটাছুটি করছিলেন। প্রথম আলোকে ওই বাবা বললেন, দুই দিন ধরে অনেক চেষ্টার পরও শয্যার অভাবে মেয়েকে ভর্তি করতে পারেননি। তৃতীয় দিন (৬ ডিসেম্বর) বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর-টিবি) ইউনিটে ভর্তি করতে পারলেও শয্যা পাচ্ছিলেন না। ওই বাবার সরল প্রশ্ন ছিল, শয্যা আর কয়টা বেশি থাকলে কী হতো?

শয্যাসংখ্যার এই অসমতা বহু বছর ধরে চলে আসছে। পর্যায়ক্রমে নারী শয্যার সংখ্যা অনেক বাড়লেও সমতা আসেনি। এই প্রবণতায় পরিবর্তন আসা উচিত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) ও সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম

রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে নারী-পুরুষের হার সমান। কিন্তু নারীদের জন্য শয্যার বরাদ্দ কম থাকায় হাসপাতালটিতে ভর্তি হতে তাঁদের অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। জানা গেছে, হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডের শয্যার ৭১ শতাংশ পুরুষ আর ২৫ শতাংশ নারীর জন্য বরাদ্দ। বাকিটা শিশুদের।

মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক ও স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ও ঢাকার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল; ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮টি হাসপাতালেই সাধারণ শয্যাসংখ্যায় নারী-পুরুষ সমতা নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের মতো তৎপর নন। রোগ চেপে রাখেন তাঁরা। নারীর এই আচরণের কারণে বহুকাল ধরে হাসপাতালে নারীর জন্য শয্যাসংখ্যা কম রাখা হয়। এখন সেটাই ‘চল’ হয়ে গেছে। সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও ন্যায্য শয্যা বণ্টনের প্রয়োজনীয়তা ঢাকা পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনার অভাবে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারীর শয্যা ১ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত কম। গাইনি ও প্রসূতি শয্যা বাদ দিলে এই পার্থক্য আরও বেশি। বিএসএমএমইউতে মোট ১৯০৪টি শয্যার মধ্যে সাধারণ শয্যা ১৪৫০টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য ৬৪৫টি এবং নারীর জন্য ৭৯টি গাইনি ও প্রসূতিসহ ৬৩০টি শয্যা রয়েছে। ৯টি হাসপাতালের মধ্যে শুধু ঢাকার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল চিত্রে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। ১২৩ শয্যার হাসপাতালটিতে মেডিসিন, অস্ত্রোপচার ওয়ার্ডে শয্যা নারী-পুরুষের সমান ২৮টি করে। সেই সঙ্গে ৮টি গাইনি বিভাগ যুক্ত করে নারীর শয্যা সার্বিকভাবে বেশি। ২০টি শয্যা শিশুদের।

বিভিন্ন জাতীয় জরিপের তথ্যমতে, কিছু রোগে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হার পুরুষের চেয়ে বেশি। বেশি অর্থ খরচ হওয়া রোগের ক্ষেত্রেও নারীরা বেশি আক্রান্ত হন। এতে চিকিৎসায় পুরুষের চেয়ে তাদের ব্যয়ও বেশি।

শয্যাসংখ্যায় সমতা আসা দরকার। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ১ হাজার ৫০০ করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে সমতা রাখার বিষয়ে ভাবা হবে।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের মতো তৎপর নন। রোগ চেপে রাখেন তাঁরা। নারীর এই আচরণের কারণে বহুকাল ধরে হাসপাতালে নারীর জন্য শয্যাসংখ্যা কম রাখা হয়। এখন সেটাই ‘চল’ হয়ে গেছে। সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও ন্যায্য শয্যা বণ্টনের প্রয়োজনীয়তা ঢাকা পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনার অভাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) ও সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শয্যাসংখ্যার এই অসমতা বহু বছর ধরে চলে আসছে। পর্যায়ক্রমে নারী শয্যার সংখ্যা অনেক বাড়লেও সমতা আসেনি। এই প্রবণতায় পরিবর্তন আসা উচিত।

শয্যা বণ্টন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে মোট হাসপাতালের সংখ্যা ৬৩৯। এগুলোতে শয্যাসংখ্যা মোট ৬৭ হাজার ৭৬৬। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) মো. ফরিদ হোসেন মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালগুলো কত শয্যার হবে, সেটা অধিদপ্তর নির্ধারণ করে। কিন্তু নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য শয্যা বরাদ্দ করে হাসপাতাল প্রশাসন।

২০২১ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ক্লাইমেট অ্যাফ্লিকসনস (জলবায়ু দুর্দশা) প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্দি, কাশি, জ্বরসহ সংক্রামক রোগে ২০১৯-২০ সালে বর্ষা মৌসুমে ৪২ শতাংশ এবং শুকনো মৌসুমে ৩৮ শতাংশ মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। শুকনো মৌসুমে দরিদ্রদের ৫১ শতাংশ এবং ধনীদের ২৯ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিত্র

মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পাঁচ মাসে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ৫৫৭ জনের ওপর একটি জরিপ করে। এতে দেখা যায়, যক্ষ্মারোগী ১৮ শতাংশ এবং অ্যাজমা রোগী ১৬ শতাংশ। এ দুটি রোগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান। তবে হাসপাতালে সাধারণ শয্যার মতো এ দুটি রোগের শয্যার ক্ষেত্রেও অসমতা রয়েছে। হাসপাতালে এমডিআর যক্ষ্মারোগীর ৭০টি শয্যার মধ্যে পুরুষের ৪০ ও নারীর ৩০টি। সাধারণ যক্ষ্মারোগীর ২০০ শয্যার মধ্যে ১২০টি পুরুষের এবং ৮০টি নারীর।

প্রতিবেদনের শুরুতে যে কিশোরীর কথা বলা হয়েছে, তার চেয়েও খারাপ অবস্থা শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব এক নারীর। সঙ্গে থাকা তাঁর ভাই প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তির আশায় দুই দিন ধরে হাসপাতালের ভেতর অবস্থান করছেন। শুনেছেন, শয্যা কম থাকায় সহজে এখানে ভর্তি হওয়া যায় না। তিন দিন ঘুরলে ভর্তি হওয়া যায়। তাই বোনকে নিয়ে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শয্যাসংখ্যায় সমতা আসা দরকার। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ১ হাজার ৫০০ করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে সমতা রাখার বিষয়ে ভাবা হবে।

বড়-ছোট হাসপাতালের চিত্র একই

দরিদ্র রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভরসাস্থল হলেও সেখানেও শয্যাসংখ্যায় চরম অসমতা। সাধারণ শয্যার ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ২৮ শতাংশ নারীর জন্য বরাদ্দ।

ঊরুর টিউমার অস্ত্রোপচারের জন্য গত নভেম্বরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন রাজধানীর হাজারীবাগের এক নারী (২৬)। তিনি জানালেন, ভর্তি হওয়ার মতো রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ করতে হয়েছে তাঁকে। বিপণিবিতানের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করা এই নারী প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা পেতে মাসখানেক ঘুরতে হয়েছে তাঁকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার চেয়ে দিনে ৫০০ থেকে ৮০০ রোগী বেশি থাকে। পুরুষের তুলনায় নারী রোগী কম আসায় শয্যাসংখ্যা কম রাখা হয়েছে। সমান রাখা হলে নারী শয্যার অনেকগুলো ফাঁকা থাকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নভেম্বর মাসের হিসাব থেকে দেখা যায়, সেখানে পুরুষের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি নারী ভর্তি হয়েছেন। তবে হাসপাতালটিতে নারীর চেয়ে পুরুষ শয্যা ৬ শতাংশ বেশি।

ঊরুর টিউমার অস্ত্রোপচারের জন্য গত নভেম্বরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন রাজধানীর হাজারীবাগের এক নারী (২৬)। তিনি জানালেন, ভর্তি হওয়ার মতো রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ করতে হয়েছে তাঁকে। বিপণিবিতানের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করা এই নারী প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা পেতে মাসখানেক ঘুরতে হয়েছে তাঁকে।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট শয্যাসংখ্যা ৫০। এর মধ্যে ৩টি কেবিন ও ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ৫টি। ৫টি শয্যা পরিবার পরিকল্পনার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। বাকি ৩৭টি শয্যার মধ্যে ১৯টি পুরুষের আর ১৮টির মধ্যে ৬টি প্রসূতি এবং ১২টি নারী ও শিশুর সাধারণ শয্যা। তবে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ নেই।

অসংক্রামক ৪ রোগে আক্রান্ত বেশি নারীরা

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮-৬৯ বছর বয়সীদের মধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্তের হার নারীদের ১২ এবং পুরুষের ৮ শতাংশ। নারী হৃদ্‌রোগে বেশি আক্রান্ত হলেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাধারণ কার্ডিওলজি ও সার্জারি ওয়ার্ডের শয্যাবিন্যাসে সেটার প্রতিফলন নেই। সেখানে শয্যার ৭০ শতাংশ পুরুষের এবং নারী ও শিশু মিলিয়ে ৩০ শতাংশ। হাসপাতালে শিশু শয্যার হিসাব আলাদা করা নেই।

নিপসম ২০২০ সালে ‘ন্যাশনাল স্টেপস সার্ভে ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ রিস্ক ফ্যাক্টরস ইন বাংলাদেশ ২০১৮’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে নারীদের ভোগার হার বেশি বলা হয়েছে। ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের হাইপারটেনশনের হার নারীদের ২৪ এবং পুরুষের ১৮ শতাংশ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বহির্বিভাগে ২০২০ সালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে পুরুষ ২০ হাজার ৫৮২ জন এবং নারী ছিলেন ১৬ হাজার ৪৮০ জন। নারীর চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি পুরুষ রোগী ছিলেন। তবে সেখানে নারীর চেয়ে পুরুষের শয্যা ১৮ শতাংশ বেশি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসীর মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, সমাজে হতাশা ও উদ্বেগে ভোগা রোগীর সংখ্যা বেশি এবং এঁদের মধ্যে নারী বেশি। ধারণা করা হয়, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে হতে পারে সেই ভয় থেকে অনেক নারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন না।

নিপসমের প্রতিবেদন অনুসারে, রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা এবং দাঁত ও মুখের ভেতরের রোগের ক্ষেত্রেও নারীরা বেশি আক্রান্ত। ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি ২৯ শতাংশ নারীর এবং ২৭ শতাংশ পুরুষের। মুখের ভেতরে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্ত পড়া, দাঁত ও মাড়িতে ব্যথা-অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন ৪১ শতাংশ নারী ও ৩৫ শতাংশ পুরুষ। তবে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার পুরুষের বেশি, ৯ শতাংশ এবং নারীর ৮ শতাংশ।

এ ছাড়া নিপসমের প্রতিবেদনে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, জরায়ুমুখের ক্যানসার আক্রান্ত কি না, তা জানতে জীবনে একবার পরীক্ষা করেছেন ১৮ থেকে ৬৯ বছর বয়সী ৪ শতাংশের কিছু বেশি নারী। তাঁদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করেছেন।

নভেম্বরে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত এক নারীর (৫৫) সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি জানান, পরিবারে তাঁর কেউ নেই। এক মাস আগে অন্যদের কাছ থেকে ঋণ করে চিকিৎসা শুরু করেছেন। তবে তাঁর সমস্যা শুরু হয়েছিল বছরখানেক আগে। চিকিৎসার খরচ মেটাতে তাঁর খুবই কষ্ট হয়।

৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে চারটি বিভাগে নারী-পুরুষ শয্যায় সমতা রয়েছে। সাতটি বিভাগে সমতা নেই। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের শয্যা বণ্টন, চিকিৎসাসহ নানা ঘাটতি রয়েছে। দারিদ্র্য, সংসারে প্রান্তিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদির কারণে ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসেন। এতে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে পড়ে যান।

দরকার যথাযথ পরিকল্পনা

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ২০১৫ সালে বিভিন্ন রোগ ও অসুস্থতায় নারী-পুরুষের খরচের হিসাব তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশ ডিজিজ স্পেসিফিক অ্যাকাউন্টস ২০১৫’ নামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বছর চিকিৎসার জন্য মোট খরচ হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নারীর জন্য ব্যয় বেশি হয়েছে ২০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা এবং পুরুষের জন্য ১৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা। ১৮ হাজার ৫৮৪ রোগীর ১ হাজার ৮৮০টি রোগ ও অসুস্থতার ওপর এই হিসাব করা হয়। এর মধ্যে ছয়টি রোগেই খরচ হয় ৫৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় হাড়, মাংসপেশিসংক্রান্ত মাসকুলোস্কেলেটাল সিস্টেম ও কানেকটিভ টিস্যু রোগে। যেটিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা ৪ শতাংশ বেশি আক্রান্ত হন। সেটি ১৬ শতাংশ।

শয্যা বণ্টনে সমতার ওপর জোর দিয়ে জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিকভাবে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে পুরুষের তুলনায় নারী শয্যা কম। তবে কোনো কোনো জেলা হাসপাতালে নারী-পুরুষ শয্যা সমান রয়েছে। হাসপাতালের শয্যা বণ্টন হওয়া উচিত কোন এলাকায় কী ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, কোন এলাকায় লোকসংখ্যা কত এবং কোন রোগে কারা বেশি আক্রান্ত, সেটার ওপর।