সাঁতার শিখে আত্মবিশ্বাসী শিশু-কিশোরেরা

গায়ে লাইফ জ্যাকেট। চোখে চশমা। মাথায় রংবেরঙের টুপি। বুকের নিচে কিকবোর্ড। এসব উপকরণ ব্যবহার করে সাঁতার শিখছে জনা দশেক শিশু-কিশোর। তাঁদের নির্দেশনা দিচ্ছেন দুজন প্রশিক্ষক। শিশুদের উৎসাহ দিতে অভিভাবকেরা মাঝে মাঝে হাততালি দিচ্ছেন। এ চিত্র চুয়াডাঙ্গা শহরের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।
শহরের পুরোনো স্টেডিয়ামের পাশে গত বছরের জুনে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। উদ্বোধন করা হয় আগস্টে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি অনুদান এবং এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আয়তনে কিছুটা কম হলেও আদর্শ সুইমিংপুলের আদলে এটি তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট, প্রস্ত ২৫ ফুট এবং গভীরতা ৫ ফুট। কেন্দ্রটি দেখভাল করছে উপজেলা প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোরেরা পানিতে কসরত করছে। প্রশিক্ষণ শেষে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অনুভব স্পর্শের সঙ্গে। সে বলে, ‘পানিতে নামলে খুব মজা লাগে।’ তার পাশে দাঁড়িয়েছিল চুয়াডাঙ্গা আলিয়া মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মাহিনুর রহমান। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাহিনুর বলল, ‘এখন যেকোনো জলাশয়ে সাঁতার কাটতে পারব।’
এ কেন্দ্রে সাঁতার শিখছে শহরের প্রদীপন বিদ্যাপীঠের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নাজিবা তাসনিয়া। মা জান্নাতুল ফেরদৌস তাকে নিয়ে এসেছেন। জান্নাতুল বলেন, ‘এই উদ্যোগ অসংখ্য শিশুকে পানিতে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।’
বর্তমানে শনি থেকে বুধবার শিশু-কিশোরদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার শিশু-কিশোরদের জন্য এটি বিনোদন পার্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য বেশ কিছু ওয়াটার রাইডও রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার জলাধারের পানি পরিবর্তনের জন্য এটি বন্ধ থাকে। প্রশিক্ষণ ফি সব মিলিয়ে এক হাজার টাকা। কেন্দ্রটিতে দুজন পুরুষ ও একজন নারী প্রশিক্ষক রয়েছেন।
নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য ও প্রশিক্ষক আজিজুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ৫৬ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের কেউই আগে সাঁতার জানত না। শীতের কারণে বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থী কমে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে প্রশিক্ষণ শুরু করবে আরও ৬০ জন।
সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি নির্মাণে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন সদর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও কে এম মামুন উজ্জামান। সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘সাঁতার না জানার কারণে প্রতিবছর অসংখ্য শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশুর সঙ্গে তাঁর পরিবারের স্বপ্নও ডুবে যায়। পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর আর শুনতে চাই না। চুয়াডাঙ্গার সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এই মডেল প্রতিটি জেলায় বাস্তবায়ন হোক, সেই স্বপ্ন দেখি।’
এ কেন্দ্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির যৌথ উদ্যোগে কে এম মামুন উজ্জামানকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পরিচালনায় জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও ইউএনওকে সেক্রেটারি করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমান ইউএনও মৃণাল কান্তি দে বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।