সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নন

সাংবাদিকতার জন্য অশনিসংকেত, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মেরুদণ্ড ভাঙার চেষ্টা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে—গত কয়েক দিনে দেশজুড়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে ঘুরেফিরে এসব কথাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমানের সঙ্গে।

গোলাম রহমান
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়ে একজন সাংবাদিককে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার পর সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ বা নিরাপত্তা বলে আর কিছু থাকে কি না?

গোলাম রহমান: একজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কী কৌশল নিয়েছেন, তা নিয়ে আইনের মুখোমুখি হতে পারেন। কিন্তু তাঁকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে দেখা গেছে, কর্মকর্তাদের আচরণ ভদ্রতার ঊর্ধ্বে চলে গেছে। একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এমন আচরণের ধৃষ্টতা তো সরকারি কর্মকর্তারা দেখাতে পারেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তথ্য প্রকাশে নানা প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ আছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের পর অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের প্রয়োগ দেখা গেল। এর মধ্য দিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে সরকার দমিয়ে রাখতে চায় কি না?

গোলাম রহমান: সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। সাংবাদিকেরা তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নন। তাঁরা যদি দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন, তাতে তো সরকারের খুশি হওয়ার কথা। আর সচিবালয় তো কোনো নিষিদ্ধ জায়গা নয়। অনুমতি নিয়েই সাংবাদিক সেখানে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের আচরণে স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা বা হুমকি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ঘটনার বিভিন্ন আংশিক ভিডিও, ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির অপকৌশল কাজ করছে বলে মনে করেন কি?

গোলাম রহমান: জনগণের করের টাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে বুস্ট পোস্টিং (টাকার বিনিময়ে প্রচার বাড়ানো) করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করা হচ্ছে। নিরপেক্ষ বিচার বা আদালতের কাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে। সরকারি টাকায় এটা করা মোটেই সঠিক হচ্ছে না, এটি নৈতিকও নয়। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সরকারিভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং সাংবাদিকদের একটি পক্ষ বানিয়ে দিচ্ছে। বিচারের আগেই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। এতে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদ ও সরকারের মন্ত্রীদের কাছ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসছে, এটার কারণ কী?

গোলাম রহমান: এটা কি সমন্বয়হীনতা, নাকি সরকারি চিন্তা তাদের কাছে পরিষ্কার নয়, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আমারও কৌতূহল হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি শুরুতেই সমাধান করতে পারতেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকতা পেশার জন্য নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এটা শুধু অনুসন্ধানী নয়, সাধারণ সাংবাদিকতার জন্যও। সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অথচ তাঁদের কর্মকর্তা দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে; যা প্রত্যাখ্যান করেছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এরপরও নতুন করে কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি, কেন?

গোলাম রহমান: তদন্ত কমিটি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। মানবাধিকার কমিশন বা কোনো একজন বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত কমিটি করা হলে তা শোভন হতো।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টাকে নানা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শনের মানসিকতা কি না?

গোলাম রহমান: আংশিক ভিডিও দেখিয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা তাঁকে দোষী প্রমাণ করে না। তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটি পরিষ্কার হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে একজন সাংবাদিক বিশেষ করে একজন নারী সাংবাদিকের শরীরে হাত তোলা, আটকে রাখা, মোবাইল ফোন জব্দ করার ঘটনা অনভিপ্রেত, দৃষ্টিকটু। এতে অনধিকার চর্চা হয়েছে।