সাংসদ নিক্সনের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী মুনতারিন চৌধুরীর (৩৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান ২ নম্বরে নিজেদের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে মুনতারিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মুনতারিনের মৃত্যু নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সাংবাদিকেরা নিক্সন চৌধুরীর বাসায় যেতে চাইলে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী বাধা দেন। তখন নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির মাধ্যমে নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে চান সাংবাদিকেরা। পরে নিক্সন চৌধুরীর বন্ধু পরিচয়ে এসে এক ব্যক্তি বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটা বা পৌনে নয়টার দিকে রাজধানীর গুলশান ২-এর ৭৬ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাসার চারতলার বারান্দা থেকে পা ফসকে নিচে পড়ে যান মুনতারিন। ফ্ল্যাটটি নিক্সন চৌধুরীর নিজের। বাইরে তখন ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। পড়ে যাওয়ার সময় তাঁর পাশে ছিল তাঁর একমাত্র মেয়ে ও বাসার গৃহকর্মী। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে পাশের সড়কের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত নয়টা ৫১ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
সাংসদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ হয়। এর পরই ওই ভবন থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার ব্যাপারে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতে তিনি ছিলেন না। অন্য একজন দায়িত্ব পালন করেছেন। নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনেরা ওপর থেকে পড়ার যে স্থানটি দেখিয়েছেন, সেখানে পড়ার কোনো আলামত দেখা যায়নি।
তবে সাংসদের সহকারী একান্ত সচিব মো. কাওসার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের স্ত্রী মুনতারিন চৌধুরী হঠাৎ হূদেরাগে আক্রান্ত হন। কাওসার হোসেন জানান, তাঁর নয় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে।
মুনতারিনের মৃত্যুর খবরে গুলশানে নিক্সন চৌধুরীর বাড়িতে আসেন তাঁর নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সাংবাদিকদের জানান, হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে সাংসদের স্ত্রী মারা গেছেন বলে জেনেছেন তাঁরা। নিক্সন চৌধুরী ও মুনতারিনের দাম্পত্য জীবন ১৮ বছরের। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় মুনতারিনের বিয়ে হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেনী।
গত দশম সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা রয়েছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লাশ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ থানায় আসেনি। মরদেহের ময়নাতদন্ত হলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ইউনাইটেড হাসপাতালে মুনতারিনের চিকিৎসা নিবন্ধন খাতায় লেখা রয়েছে, ‘মাল্টিপল ইনজুরি, ফল ফ্রম হাইট।’ গুলশান থানার কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) পিয়াসউদ্দিন বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় একই ধরনের লেখা একটি কাগজ পাঠানো হয়েছে।
বিকেলে হাসপাতালে গেলে ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মেজর (অব.) মইনুল হোসেন বলেন, মুনতারিনকে তত্ত্বাবধানকারী চিকিৎসক অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যস্ত আছেন।