সাতক্ষীরায় ভাঙনের মুখে বেড়িবাঁধ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী খেয়াঘাটের কাছেও বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার বাড়িঘরসহ চিংড়িঘের তলিয়ে যেতে পারে। আমনের খেতও নষ্ট হতে পারে। এ নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছেন।
আশাশুনির হাজরাখালীর মুক্তিযোদ্ধা আমির জোয়ার্দার ও চিংড়ি ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে খোলপেটুয়া নদীর হাজরাখালী খেয়াখাটের পাশ দিয়ে পাউবোর বাঁধ ভাঙছে। হঠাৎ গত বুধবার এ ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বর্তমানে ৩০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। অবস্থা এতটাই নাজুক, যেকোনো সময় নদীর পানি লোকালয় ঢুকে শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী, মাড়িয়ালা, বকচর, নাঙ্গলদাঁড়িয়া, নাকতাড়া, বুড়োখাঁরআটিসহ ২২টি, সদর ইউনিয়নের হাড়িভাঙ্গা, নাটানা, বলাবাড়িয়া, দাশেরআটি, কদমদাহসহ ১৯টি এবং প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা ও হিজলা গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে। এটা হলে ১৫ হাজার পরিবারের বাড়িঘর এবং সাত হাজারের মতো চিংড়িঘের ভেসে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।
শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, তাঁর উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে। পাউবো থেকে কিছু বাঁশের খাঁচা সরবরাহ করা হয়েছে। নদীর পানি যাতে লোকালয়ে না ঢোকে, এজন্য প্রাথমিকভাবে একটি রিং বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ওয়াজেদ আলী চাকলাদার জানান, ইতিমধ্যে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাঙন দিয়ে যাতে পানি লোকালয়ে না ঢোকে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জোয়ারের আগে পর্যন্ত ভাঙন ঠেকাতে কিছু কাজ করা হয়েছে। এরপর গানিব্যাগ ফেলা হবে।
এদিকে সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, খোলপেটুয়া নদীর শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সরদারবাড়ি-সংলগ্ন এলাকায় ১০০ মিটারজুড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর ইটের নির্মিত সড়কের একাংশ নদীতে চলে গেছে। আশপাশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
শ্যামনগর বিজি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম গাজী জানান, ১৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে সরদারবাড়ি-সংলগ্ন পাউবোর বেড়িবাঁধের ১০০ মিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনস্থল একেবারে কলেজের বিপরীতে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকতে পারে। এতে কলেজটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী, কলবাড়ি, ভামিয়া, পুড়াকাটলা, দাতিনাখালি, দুর্গাবাটি ও আড়পাঙ্গিয়া এলাকার বাড়িঘর তলিয়ে ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বুড়িগোয়ালিনীর চিংড়ি ব্যবসায়ী মোশারফ গাজী ও আশরাফুল ইসলাম জানান, বুড়িগোয়ালিনী এলাকার পাউবোর ওই বাঁধ ভেঙে গেলে কয়েক হাজার চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঘের ভেসে যেতে পারে। তলিয়ে যাবে কয়েক হাজার বিঘার আমন ফসল।
শ্যামনগর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী নিখিল চন্দ্র দত্ত জানান, ৫০-৬০ মিটারজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে তা বাড়ছে। কিন্তু জরুরি কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে সদিচ্ছা সত্ত্বেও কাজ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।