সাত দিন ধরে পানি নেই

মাদারটেক আবাসিক এলাকার প্রায় সব সড়ক ভাঙাচোরা। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পানিসংকট প্রবল, ওয়াসার সরবরাহ করা যেটুকু পানি আসে তাতে দুর্গন্ধ। অধিকাংশ মহল্লায় নেই পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা।
গত বুধবার বিকেলে মাদারটেক আবদুল আজিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি নাগরিকদের ওই সমস্যা দ্রুত সমাধানে আশ্বাস দেন।
পূর্ব মাদারটেকের বাসিন্দা মোহাম্মদ মোমিন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইনের সমস্যা রয়েছে। লাইনে খুব অল্প পরিমাণ পানি আসে, তাতেও দুর্গন্ধে ভরা। এর মধ্যে সাত দিন ধরেও কোনো পানি পাচ্ছেন না ওই এলাকার বাসিন্দারা।
মাদারটেক ওয়াহাব কলোনির বাসিন্দা মোহাম্মদ গোলাম বলেন, কলোনির ১২টি গলির মধ্যে মাত্র তিনটিতে পয়োনিষ্কাশন লাইন রয়েছে, বাকি ৯টি গলির বাসিন্দা খোলা ড্রেনে পয়োবর্জ্য লাইনের সংযোগ দিয়েছেন। এতে ওই এলাকায় মারাত্মকভাবে পরিবেশদূষণ ঘটেছে। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ এ কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
পূর্ব মাদারটেকের আরেক বাসিন্দা তৌফিক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বাসাবো এলাকায় পয়োনিষ্কাশনের লাইন নেই। বাড়ির মালিকেরা নালা দিয়ে পয়োনিষ্কাশনের পাইপ লাগিয়ে দেন। ফলে সড়ক দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটা যায় না।
এই সমস্যার সমাধানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কার্যকর কী পদক্ষেপ নেবে, তা জানতে চান মেয়র সাঈদ খোকন। মঞ্চে থাকা ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৬-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) ওই এলাকা দুটি পরিদর্শন করবেন ওয়াসার একটি লোকজন। পাশাপাশি এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পূর্ব মাদারটেকের বাসিন্দা শাহজাহান কবির বলেন, ‘মাদারটেকের ১ ও ২ নম্বর সিঙ্গাপুর সড়কটি কাঁচা রয়েছে। অথচ এই সড়ক দিয়ে দিনে অসংখ্য লোকজন চলাচল করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা পাকা করতে হবে।’ মেয়র ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুততম সময়ে ওই সড়ক পাকাকরণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, মাত্র এক বছর আগে মাদারটেক এলাকায় ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এখন আবার কয়েক গুণ ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া এই এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব রয়েছে। সারা দিনই বাসাবাড়িতে মশা ওড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই অনেক সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নাগরিকদের সব সমস্যা ও অভিযোগ শুনে সাঈদ খোকন বলেন, মাত্র ৪২ বর্গকিলোমিটারের শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এই ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মানুষকে সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসসিসি। ডিএসসিসি এলাকার কোনো সড়ক ভাঙাচোরা ও কাঁচা থাকবে না। এই এলাকার সব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, ডিএসসিসির প্রতিটি সড়কে এলইডি লাইট লাগানোর কাজ চলছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেকের ঘরের সামনে এই লাইট জ্বলবে।
৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম কে বখতিয়ার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সাখাওয়াত হোসেন, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার প্রমুখ।