সামর্থ্য হলে সব ভাস্কর্য অপসারণ করবেন মামুনুল

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকছবি: প্রথম আলো

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, আইনি, নৈতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সামর্থ্য হলে সব ভাস্কর্যই এই জনপদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তাদের অবস্থান ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।

আজ রোববার দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন। মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি। কখনো কোনোভাবেই এমন একজন মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচরণ করি না এবং করাকে সমীচীনও মনে করি না।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাস্কর্য স্থাপনের চেষ্টা করা হলে সামর্থ্যের মধ্যে এর বিরুদ্ধে তিনি বলেই যাবেন। তবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে জড়াবেন না। এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না যেটা হঠকারী হয় বা জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।

এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া বা এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিইনি। আমি বলেছি, আদর্শিক জায়গা থেকে কোনো ভাস্কর্য রাখা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘যখন থেকে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছি, তখন থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, ভাস্কর্য যাঁরই হোক, জিয়াউর রহমানের হোক অথবা অন্য যাঁরই হোক, আমি ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে। সব ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছি।

আমাদের আইনগতভাবে, নৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সামর্থ্য থাকলে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যসহ সব ভাস্কর্যই আমরা মুসলমানদের জনপদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ নেব।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মামুনুল হক বলেন, কোরআন–সুন্নাহর আলোকে পূর্বসূরিদের অনুসৃত পথে স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ অর্জনের চেষ্টা চালানোই তাঁর ব্রত। কোনো ষড়যন্ত্র অথবা গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র কিংবা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি তাঁদের নেই।

অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জোটবদ্ধ রাজনীতিতে ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে তাঁদের সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনো রাজনৈতিক জোটে যুক্ত নন। একটি মহল ষড়যন্ত্র মূলকভাবে তাঁকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

ধর্মভিত্তিক দলটির নেতা বলেন, কিছুদিন ধরে ঢাকার দোলাইর পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গন। স্বাভাবিকভাবেই ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কিংবা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি হওয়ায় আলেমসমাজ এর প্রতিবাদ করছেন।

সেই সূত্রে তিনিও ভাস্কর্য, তথা মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু সুকৌশলে একটি মহল ভাস্কর্য নির্মাণের এই বিরোধিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছে।

মামুনুল হক বলেন, সারা পৃথিবীতে ধর্মীয় যতগুলো স্কুল অব থট রয়েছে, ভাস্কর্যের পক্ষে কোনো কথা বলার অবকাশ নেই। এ জন্য সবাই ভাস্কর্য-মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং বলবে। সেই জায়গা থেকে তিনিও বলছেন। এখানে অন্য সবাইকে উপেক্ষা করে শুধু তাঁকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সাব্যস্ত করে এবং কথার বিকৃতি ঘটিয়ে, মূল বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠনগুলোকে তাঁর বিরুদ্ধে ময়দানে নামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

কারা ষড়যন্ত্রকারী, এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, ‘যারা এ দেশে ইসলামকে এবং ইসলামি শক্তিগুলোকে দুর্বল করতে চায়, তারা প্রধানত এর পেছনে রয়েছে। আর তাদের সঙ্গে আলেমসমাজ থেকে বিচ্যুত কিছু ব্যক্তির জড়িত থাকার আলামত রয়েছে।’