সুতি কাবাবের জুম্মন রুটিওয়ালা

দুই পাশে দুটি বড় লোহার শিক। তার মধ্যে ঢোকানো বড় আকারের সুতি কাবাব। এর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন ষাট বছরের এক বৃদ্ধ। তাঁর নাম বাবুল মিয়া। তিনি এই দোকানের মালিক। বাবুল মিয়া দাবি করলেন, ‘সুতি কাবাবের জন্ম ইতিহাস জানতে হলে তাঁকে জানতে হবে। চিনতে হবে তাঁর দাদা আর বাবাকে। যাঁদের হাত ধরে চকবাজারে সুতি কাবাব এসেছে।’

বাবুল মিয়ার দোকান চকবাজারে। এ দোকানে সুতি কাবাব ছাড়া আর কিছুই নেই। রোববার ছিল রোজার প্রথম দিন। ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম সুতি কাবাব।

বাবুল মিয়া পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। তাঁর দোকান পুরান ঢাকার ইসলামপুরে। কিন্তু রোজার মাসে চলে আসেন চকবাজারে। বংশপরম্পরায় সুতি কাবাব বানিয়ে আসছে তাঁর পরিবার। বাবুলের দাদার নাম জুম্মন রুটিওয়ালা। বাবার নাম আবদুস সোবহান।

বাবুল যখন সুতি কাবাবের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর মুখে বারবারই জুম্মনের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। বেশ গর্বের সঙ্গে বাবুল বললেন, পুরান ঢাকার মানুষের অত্যন্ত প্রিয় খাবার সুতি কাবাব। ইফতারে তুমুল জনপ্রিয় এই কাবাব। কিন্তু অনেকেই জানেন না, সুতি কাবাবের সূত্রপাত হয়েছে তাঁর পরিবার থেকে। দাদা জুম্মনই কাবাবের জন্মদাতা। সুতি কাবাবের জন্মের ইতিহাসের বলার সময় তাঁর দোকানের সামনে ভিড় জমে যায়। দেখা গেল, এক কেজি সুতি কাবাব বিক্রি করছেন ৭০০ টাকায়।

জুম্মন রুটিওয়ালার নাতি বাবুলও ৪০ বছর ধরে চকবাজারে সূতিকাবাব বানান। ছবি: আসাদুজ্জামান
জুম্মন রুটিওয়ালার নাতি বাবুলও ৪০ বছর ধরে চকবাজারে সূতিকাবাব বানান। ছবি: আসাদুজ্জামান

চকবাজার ঘুরে দেখা গেল, কেবল বাবুলের দোকানেই নয়, আরও কয়েকটি দোকানে রয়েছে সুতি কাবাব। ক্রেতাদের বড় অংশ কাবাব কিনছিলেন। পুরান ঢাকার বাসিন্দা আবদুল মুত্তালিব বলেন, সুতি কাবাবের স্বাদ অন্য রকম। অন্য খাবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ইফতারে তিনি সুতি কাবাব রাখার চেষ্টা করেন। কিনেন চকবাজার থেকেই।

সুতি কাবাবের প্রধান উপকরণ মাংস আর বুটের ডাল। দোকানি বাবুল মিয়া জানান, কাবাব বানাতে হলে লাগবে মাংস। সেটা গরু হোক কিংবা খাসি। লাগবে বিভিন্ন প্রকারের মসলা। ৪০ বছর ধরে সুতি কাবাব বানানো বাবুল বললেন, ‘টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে তিনি সুতি কাবাব বানান না। দাদা করেছেন। বাবা করেছেন—তাই তিনিও করেন। করতে বড় ভালো লাগে।’

বাবুলের আশা, যত দিন তিনি বাঁচবেন, রোজার মাসে চকবাজারে সুতি কাবাবের দোকান দেবেন। আর চিৎকার করে বলবেন, ‘যে যাই বলুক, সুতি কাবাবের জন্মদাতা জুম্মন রুটিওয়ালা। চকবাজারে তিনিই নিয়ে এসেছেন এই কাবাব। চকের অন্য লোক তাঁদের কাছ থেকে কাবাব বানানো শিখেছেন।’

সুতি কাবাব বানানোর জন্য রোজার এক মাস আগে থেকে প্রস্তুত হন তিন ছেলের জনক বাবুল। ইচ্ছা করলে অন্য পদের খাবার ইফতারির বাজারে আনতে পারতেন তিনি। সারা বছর থাকেন কাপড়ের ব্যবসা নিয়ে। এক মাস সুতি কাবাব বানিয়ে যে আনন্দ পান, তা অন্য কোনো কাজ করে পান না। শুধু ভালো লাগা থেকে এখনো চকবাজারে প্রতি বিকেলে কাবাবের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ক্রেতার। চিৎকার করে বলতে পারেন, ‘সুতি কাবাবের জন্মদাতা জুম্মন রুটিওয়ালা।’